খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫: বিপিএলের ভুলগুলো নিয়ে বেশি ভেবে নিজের ওপর চাপ নিতে পান না সৌম্য সরকার। বরং ব্যাটিং নিয়ে কাজ করে জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান নিজেকে প্রস্তুত করতে চান এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য।
ক্লান্তিকর সূচির বিপিএল শেষে প্রায় সব ক্রিকেটারই এখন আছেন ছুটির আমেজে। বিপিএলের আগে ছিল লম্বা মৌসুম। আপাতত তাই ক্রিকেট থেকে দূরে নিজের মত করেই সময় কাটাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ব্যতিক্রম কেবল সৌম্য। বিপিএল শেষ হওয়ার পর দিন থেকেই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরের নিয়মিত মুখ এই তরুণ ব্যাটসম্যান।
কাতর নন বিপিএল ভাবনায়
শনিবারও ইনডোরে লম্বা সময় ব্যাটিং অনুশীলন করলেন সৌম্য। আকাক্সিক্ষত অবসর পেয়েও বিশ্রাম না নিয়ে অনুশীলনে? প্রশ্ন শুনে আর বিস্ময়ভরা চাহনি দেখে হাসলেন সৌম্য, “আসলে বাড়ি যাব আমিও। তবে ২২ তারিখ। এই সময়টায় ভাবলাম, বাসায় ঘুমিয়ে না থেকে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করি। লাভ হবে।”
ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতে চাইতেই অবশ্য মজা করে বললেন, “বিপিএলে ফ্লপ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কী কথা বলবেন!”
রসিকতা করেই বলেছেন, তবে উপলব্ধিটা সত্যি। বিপিএলের আগে তিনি ছিলেন টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সেরা তারকাদের একজন। তাকে ভাবা হচ্ছিল ম্যাচের ভাগ্য গড়ার নিয়ামক হিসেবে। শেষের হিসাব বলছে, সৌম্য ছিলেন বিপিএলের বড় হতাশা। রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১২ ইনিংসে একটি মোটে অর্ধশতক; ২৫ ছোঁয়া ইনিংস নেই আর একটিও! মাত্র ১৬.০৯ গড়ে রান ১৭৭।
নিজের পারফরম্যান্সে হতাশ সৌম্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, এই টুর্নামেন্টে পেছন ফিরে তাকাতে চান না তিনি।
“বিপিএল শেষ। যেটা চলে গেছে, সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। তাকিয়ে আছি সামনে।”
প্রথম দুই ম্যাচে ঝড়ের গতিতে শুরু করেছিলেন (৯ বলে ২০ ও ৭ বলে ১৭), ইনিংস বড় করতে পারেননি। পরের ম্যাচগুলোতেও দেখা গেছে ২২ গজে গিয়েই ছটফট করছেন সৌম্য, শট খেলতে করছেন তাড়াহুড়ো।
একমাত্র অর্ধশতকটি করেছিলেন ষষ্ঠ ম্যাচে। নিজের আক্রমণাত্মক মানসিকতার সঙ্গে কিছুটা আপোশ করে সেদিন অপরাজিত ছিলেন ৫৬ বলে ৫৮ রানে। সেই ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছিলেন, “আগের ম্যাচগুলোয় বেশি তাড়াহুড়ো করেছি।”
কিন্তু সেই উপলব্ধির প্রতিফলন আর দেখা যায়নি পারফরম্যান্সে। পরের ম্যাচগুলোতে অতিআক্রমণাত্মক হতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
টুর্নামেন্ট চলাকালে অনেক কথাই হয়েছে সৌম্যর ব্যাটিং নিয়ে। তবে তিনি অটল থেকেছেন নিজের ভাবনাতেই।
“অনেক ধরনের কথাই আসে। এই সময়ে অনেকেই অনেক কিছু বলছে। কিন্ত আমি চেয়েছি নিজের ভাবনাতেই অটল থাকতে। কারণ সবার কথা শুনতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এজন্য নিজেই চেষ্টা করেছি।”
ভাবনাটা ঠিকই ছিল। বাজে সময়ে অনেকের কথা শুনতে গিয়ে ভজকট পাকিয়ে ফেলার উদাহরণ ক্রিকেটে গণ্ডা গণ্ডা আছে। তবে সৌম্যর ভাবনাটা ঠিক থাকলেও প্রয়োগটা ঠিকমত হয়নি। বের হতে পারেননি রান-খরার চক্কর থেকে।
তাতেও অবশ্য নিজের ভাবনা বদলাননি সৌম্য।
“আমি নিজের মত খেলে গেছি। চিন্তা এসেছে অবশ্যই, তবে সেসব প্রশ্রয় দেইনি।”
বিবর্ণ কয়েক মাস
বিপিএলের প্লেয়ার্স বাই চয়েজ-এ প্রথম সুযোগেই সৌম্যকে দলে নিয়েছিল রংপুর রাইডার্স। প্রথম সুযোগে অন্য সব দলই হয়ত তাকেই টানত। এই বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং সেনসেশন তো তিনিই। ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তুলোধোনা করেছেন ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার সমীহ জাগানিয়া বোলারদেরও। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে গত কয়েক মাসে ছিলেন বিবর্ণ। সেপ্টেম্বরে ভারতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে তিনটি একদিনের ম্যাচে রান করেছিলেন ৯, ২৪ ও ১, দুটি তিন দিনের ম্যাচে রান ০ ও ১৯, ০ ও ৪৩।
অক্টোবরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও একই চিত্র। তিনটি একদিনের ম্যাচে রান ৮, ২১ ও ২০। একমাত্র তিনদিনের ম্যাচে ২০ ও ৩০।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে অনুশীলনে পাঁজরে চোট পেয়ে দর্শক হয়ে থাকলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে। বিপিএলে মাঠে ফিরলেও ব্যাটে ফিরল না রান।
সৌম্যর দাবি, রান খরার এই সময়টা তাকে শিখিয়েছেও অনেক কিছু।
“সব খেলা থেকেই শেখার কিছু আছে। বিপিএল থেকে সবচেয়ে বেশি যেটা শিখেছি, ভিন্ন ধরনের উইকেটে ব্যাট করা। সাধারণত মিরপুরের উইকেট যেমন থাকে, এবার তেমন ছিল না। আমি ভালো করতে পারিনি। তবে শিখেছি অনেক।”
বোলিং-বিরতি চোটে
ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে এতটাই সাফল্য পেয়েছেন, বোলার সৌম্যকে ভুলে গেছে অনেকেই। অথচ গত বছরের ডিসেম্বর তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক অলরাউন্ডার হিসেবেই। বিশ্বকাপ দলেও ঠাঁই মিলেছিল অলরাউন্ডার পরিচয়েই।
কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বা ‘এ’ দলের হয়েও তার মিডিয়াম পেস দেখা গেছে সামান্যই। লম্বা এই বিপিএলে তো একবারও নয়!
সৌম্য জানালেন, চোটের কারণেই আপাতত বোলিং করছেন না।
“পাঁজরে একই জায়গায় দুটি চোট পেলাম, দুটিই বোলিং করতে গিয়ে। এজন্যই বোলিং কম করছিলাম। ব্যাটিংয়ে একটু বেশি মনোযোগও দিয়েছি। বোলিংয়ে যেহেতু চোট পেয়ে যাচ্ছি, সেটায় আর জোর করিনি।”
দৃষ্টি সামনে
ক্রিকেটের মাঝারি সংস্করণ, মানে ওয়ানডেতে এসেই দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। তবে টেস্টে পাকা করতে পারেননি জায়গা, টি-টোয়েন্টিতে তিনি অচেনা।
টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে বারবারই বলেছেন, নিজের সহজাত ব্যাটিং করেই পেতে চান সাফল্য। টি-টোয়েন্টিতেও ভাবনা বদলাচ্ছে না ২২ বছর বয়সী ব্যাটিং প্রতিভার।
“টি-টোয়েন্টিতে সফল হতে পারিনি। বুঝতে পারছি না, কিভাবে খেলা উচিত। আমি ওয়ানডের মতোই খেলে যাব।”
অবশ্য ছোট সংস্করণটির দাবি মেনে ব্যাটিং যে একটু শাণিত করতেও হবে, সেই ভাবনা একেবারেই উপেক্ষা করছেন না।
“কিছু কাজ তো করতেই হবে। বিশ্বকাপ আছে, তার আগে এশিয়া কাপ। তার আগের সময়টায় লম্বা বিরতি আছে। কাজে লাগাব। এই ফরম্যাটে আমরা অনেক কম খেলি, অভিজ্ঞতা কম। বিশেষ করে আমার। কোনো সিনিয়র ক্রিকেটার, কোচের সঙ্গে কথা বলব।”
তবে বিপিএলের ভুল আর ভবিষ্যতে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতেই হবে, এমন ভাবনায় ভারাক্রান্ত হতে চান না সৌম্য। আপোশ করবেন না নিজের সহজাত ও সোজা-সাপ্টা দর্শনের সঙ্গেও।
“বিপিএল চলার সময়ও ভুলগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করিনি। এসব চিন্তা করলে হয়ত আত্মবিশ্বাস আরও নিচে নেমে যেত। ব্যাটিংয়ে বেসিক সমস্যা তো ছিল না! এজন্য ভাবনা এরকম যে বিপিএল শেষে এই সময়টায় একটু তরতাজা হব আর ব্যাটিংয়ে আরেকটু মনোযোগ দেব। এই তোৃ।