Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

53খোলা বাজার২৪,সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: চলন্ত ট্রেনের কামরায় তিনি শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই কামরা থেকেই ব্যাগও হারানো গেছে তার কিন্তু গোটা ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে গিয়ে চূড়ান্ত নাকাল হতে হল তমলুকের এক বধূ ও তাঁর স্বামীকে। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, এক অভিযুক্তকে পাকড়াও করে ধরিয়ে দিতে গিয়েও পারলেন না তাঁরা।

তমলুকের পদুমবসানের বাসিন্দা ওই দম্পতির এই তিক্ত অভিজ্ঞতা হল এমন একটা সময়ে, যখন রেলযাত্রীদের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা সহজ করতে নানা পদক্ষেপ হচ্ছে, গুরুত্ব পাচ্ছে মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়টিও। এমনকী খোদ রেলমন্ত্রী টুইট-বার্তায় ঘটনা জেনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সে সবের মাঝেও এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ে রেলকে এখনও অনেক দূর এগোতে হবে!

বছর বত্রিশের ওই বধূ স্বামী, ছেলেমেয়ে, প্রতিবেশী এক প্রৌঢ়াকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভেলোরে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার জন্য গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটায় কাটপাডি স্টেশন থেকে হাওড়াগামী ডাউন যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসে ওঠেন তাঁরা। যুবতীর ডান হাতে অস্ত্রপচার হয়েছিল। তখনও বাঁধা ছিল ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, ট্রেনে উঠেই নাকে লাগে মদের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। বেশিরভাগ যাত্রীই তখন ঘুমিয়ে পড়েছেন। খবর-আনন্দবাজার।

যুবতী বলেন, ‘‘খেয়াল করে দেখি আমাদের উল্টো দিকের আপার বার্থে এক জোড়া যুবক-যুবতী বসে মদ্যপান করছে, অশালীন আচরণ করছে। প্রতিবাদ করলে ছেলেটি শাসায়।’’ শুক্রবার সকালে আশপাশের যাত্রীরা ঘটনাটি জেনে তমলুকের ওই যুবতীকে সমর্থন করেন। তাতে যুবকটি আরও খেপে যায়। সেই রাতেই ওই যুবক তমলুকের বধূর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। বধূটির কথায়, ‘‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অচেনা স্পর্শ পেয়ে চেয়ে দেখি ওই ছেলেটি অভব্যতা করছে।’’ তবে যুবকটিকে ধরতে পারেননি ওই বধূ ও তাঁর স্বামী। বরং জায়গায় ফিরে দেখেন একটি ব্যাগ গায়েব! ওই বধূর দাবি, ব্যাগে কয়েক হাজার টাকা ও কিছু সোনার গয়না ছিল।

শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত যুবকটি চম্পট দিলেও তার সঙ্গিনী কিন্তু পালাতে পারেনি। কামরার সব যাত্রীরা মিলে তাকে ধরে ফেলে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, যুবতী বাংলাদেশের বাসিন্দা। তবে সঙ্গী যুবককে সে চেনেই না বলে দাবি করে। তা হলে এক সঙ্গে কী করছিলে? ওই যুবতীর জবাব, ‘‘ছেলেটি আমাকে বসার জায়গা করে দিয়েছিল। সেই থেকেই আলাপ।’’ যুবতীকে রেলপুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তমলুকের ওই দম্পতি। অভিযোগ, এর পরই শুরু আর এক দফা হয়রানি।

ওই বধূ বলেন, ‘‘ট্রেনের কামরায় এক জনও নিরাপত্তারক্ষীর দেখা পাইনি। আরপিএফ-ও সাহায্য করেনি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, খক্ষপুর স্টেশনে ট্রেন থামলে কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষককে প্রথমে তাঁরা সব জানান। তিনি যেতে বলেন আরপিএফের কাছে। কিন্তু আরপিএফ কর্মীরা বলে দেন, ‘এটা ট্রেনের ভেতরের ব্যাপার। হয় ট্রেনের নিরাপত্তারক্ষীকে বলুন, না হলে মেচেদায় নেমে অভিযোগ জানান।’’ কিন্তু মেচেদায় পৌঁছেও হয়রানির এক শেষ। আরপিএফ জওয়ানরা সব শুনে বলেন, ‘‘আমাদের মহিলা আরপিএফ নেই। ফলে, আপনারা সঙ্গে করে যে যুবতীকে এনেছেন, তাঁকে নিয়ে কিছু করতে পারব না।’’ পরিস্থিতি বুঝে ওই যুবতীও চম্পট দেয়।

পরে অবশ্য গোটা ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ওই বধূ। খক্ষপুরের ডিআরএম রাজকুমার মঙ্গলা বলেন, “অভিযোগ পেয়ে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের আরপিএফ যথেষ্ট সক্রিয়। সেই রাতে খক্ষপুর থেকেই মেচেদায় খবর দেওয়া হয়েছিল। মেচেদায় আরপিএফ কর্মীরাও ছিলেন। কিন্তু মহিলা ফোর্স ছিল না এটা দুর্ভাগ্যের।”

খক্ষপুর আরপিএফ (ইস্ট)-এর ওসি কমলেশ সমাদ্দারেরও বক্তব্য, “আমরা মৌখিক অভিযোগেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিই। প্রয়োজনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে ব্যবস্থা নিই। এই ঘটনার তদন্ত করছি।” বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষও।

তমলুকের দম্পতি অবশ্য যথেষ্ট হতাশ। বধূটির কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম অভিযুক্তকে ধরে আনায় এক হেস্তনেস্ত হবে। কিন্তু কোথায় অভিযোগ জানাব, সেটাই বুঝে উঠতে সময় চলে গেল। এমনটা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়।’’