খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদের নাজমুল হক প্রধানের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ভাতার পরিমাণ ৯শ’ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকায় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ২ লাখে উন্নীত করা হয়েছে এবং গত জানুয়ারি থেকে মাসিক সম্মানি ভাতা ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গত জানুয়ারি মাস থেকে মাসিক ভাতা ৬ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার টাকায়, বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ৮ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায়, বীর উত্তম খেতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায় এবং বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের ১২ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করার বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সর্বনিম্ন ৯ হাজার ৭শ’ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই ভাতার হার সর্বনিম্ন ২২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার টাকায় বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন সময়ের সংগ্রাম-আন্দোলনের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ঘটনা ও মুক্তিযুদ্ধের সচিত্র ইতিহাস ও দলিল পত্রাদির ১৪৪টি গ্লাস প্যানেলে মুদ্রণ করে ভূ-গর্ভস্থ জাদুঘর সজ্জিতকরণের কাজ করা হয়েছে। জাদুঘরে লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেম ও মাল্টিমিডিয়া শো স্থাপনসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধির রেপ্লিকা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি আরো আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন ও আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য আগারগাঁওয়ে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ বর্তমানে সমাপ্তির পথে রয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রবাহ মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মেধবাী সন্তান ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লেখাপড়ায় সহায়তা ও উৎসাহ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি’ চালু করেছে। তাছাড়া ২০১২ সালে চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীগণের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে সরকারি চাকরিজীবীদের বয়স বৃদ্ধি করার কোন পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বর্তমান সরকারের আমলেই গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের ক্ষেত্রে ৫৭ থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।