খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ মার্চ ২০১৬ : নবনানীর যে বাড়িতে মধ্যরাতে আগুন লেগে কয়েকটি ফ্লোর পুড়েছে তার পাশের গ্যাসলাইনের ছিদ্র বন্ধে কয়েক ঘণ্টা আগে তিতাসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাসিন্দারা, তবে তিতাস কর্মীরা এসেছে আগুন লাগার ঘণ্টা দেড়েক পরে।
আর যে ছিদ্র থেকে গ্যাস বেরিয়ে এই বিস্ফোরণ বলে ধারণা করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হয়েছে শুক্রবার সকালে।
এ ঘটনায় তিতাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন ভবন মালিক শামসুল আলম, যার এক ছেলে আগুনে ঝলসে গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে বনানী ২৩ নম্বর সড়কের ছয় তলা ওই ভবনে আগুন লেগে তৃতীয়তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান।
আগুন লাগার পর তৃতীয়তলা থেকে উপরের সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা আতঙ্কে ছাদে উঠে যান এবং সেখানে আটকা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের নামিয়ে আনেন।
এ ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বাড়িওয়ালার ছেলে নাভেদ ইমতিয়াজ দগ্ধ হয়েছেন, বাকিরা তাড়াহুড়ায় নামতে গিয়ে আহত হন বলে বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নাজমুল হোসেন জানান।
বিস্ফোরণে ভবনের দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার সামনের দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে ‘ফলস পিলারে’। ভাঙা দেওয়াল আর পোড়া ব্যালকনি কোনো ভবনে বড় ধরনের বিস্ফোরণ পরবর্তী চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ভবনটিতে বিকালেও বাসিন্দাদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়নি। দুপুরে প্রতিটি ফ্ল্যাটের একজন করে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয় মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজউক ও তিতাসের কর্মকর্তারা।
বাড়িটির সামনে দিয়ে ওয়াসার স্যুয়ারেজের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। তাদের কাজ শুরুর পর কয়েকদিন আগে ভবনটির সামনে থেকে গ্যাসের গন্ধ আসতে থাকে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের কথায়ও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে গ্যাসের লাইনে সমস্যার কথা জানিয়ে আমার এক ঠিকাদার গত পরশু তিতাসে লিখিত দিয়েছে।”
ওই ভবনের বাসিন্দা এক নারী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকেও তারা ফোন করে তিতাস কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু ‘লেবার’ নেই, এই অজুহাতে কর্তৃপক্ষ লোক পাঠায়নি।
পরে আগুন লাগার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে তিতাসের কর্মীরা এসে ভবনটির গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিতাস গ্যাসের উপ পরিচালক হারুণ অর রশিদও লোক সঙ্কটের কথা বলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিতাসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শিবেন্দ্র নাথ ঘোষ বলেন, পাশের ওই ভবনের গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র পেয়েছেন তারা।
“ভবনের নীচ দিয়ে ২ ইঞ্চি পাইপ গেছে। তাতে পৌনে এক ইঞ্চি ছিদ্র করে সেখানে পাইপ বসিয়ে বাসায় গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়। মূল লাইনের একটা সংযোগে পাইপ ছিল না, সেখানে ছিদ্র দিয়ে অনবরত গ্যাস বেরোচ্ছিল।
“ওই গ্যাস কোনোভাবে পানি বা স্যুয়ারেজ পাইপে প্রবেশ করে। প্রচুর গ্যাস পাইপে ঢুকে পড়ায় বিস্ফোরণ হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।”
বিস্ফোরণে ওই বাড়ির সামনের দিকের ৯২ ও ৯৪ নম্বর ভবনেরও জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এছাড়া দুই পাশের দুই ভবনেও জানালার কাঁচ, দরজা ভেঙে গেছে।
ছয়তলা ওই ভবনের প্রতিটি তলায় চারটি করে ফ্ল্যাট। দ্বিতীয় তলায় একটি বায়িং হাউজের অফিস ছাড়া সব ইউনিটই আবাসিক।
ভবন পরিদর্শনের পর রাজউকের অথোরাউজড অফিসার মো. আদিলুজ্জামান বলেন, “এতে কোনো কাঠামোগত ত্রুটি দেখা দিয়ে তা আমি বলতে পারব না। তবে এই ভবনে বসবাস করতে হলে অনেক কাজ করতে হবে।
“সামনের দিকের ফ্ল্যাটগুলি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যগুলোর তেমন ক্ষতি না হলেও কোনোটির দরজা ও জানালার গ্লাস অক্ষত নেই।”
বুয়েটের প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করে মতামত দেওয়ার আগে ভবনে কাউকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৬ ফেব্র“য়ারি ভোরে উত্তরার এক ভবনের সপ্তম তলায় গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়।