খোলাবাজার২৪,সোমবার,২১,মারচ,২০১৬।। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (দফতরের দায়িত্বে) এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বার্তায় জানান,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তবলীভ গৃহীত হয়।
১। মহান স্বাধীনতার মাস মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। এই কাউন্সিল মহান স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেনানায়ক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, জননন্দিত রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালনকারী মরহুম জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি। একই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে যারা সহযোগিতা করেছেন, সমর্থন জানিয়েছেন, সহায়তা দিয়েছেন এবং যারা অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের সকলের প্রতি এই কাউন্সিল কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
২। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল দেশে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নিহত সকল বীর শহীদকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে। একই সাথে নিহতদের শোকার্ত পরিবারবর্গের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
৩। গণতন্ত্রের এই চলমান সংগ্রামে যারা গুম হয়েছেন, আহত হয়েছেন, যারা কারা নির্যাতন সহ্য করেছেন, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি এই কাউন্সিল সহানুভূতি জ্ঞাপন করছে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে তাদের এই মহান আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।
৪। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনপরিচালনাকমিশন কর্তৃক বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত ঘোষণার সিদ্ধান্তকে এই কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করছে এবং পুনর্বার দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ায় গণতন্ত্রের সংগ্রামে আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে।
একই সাথে দলীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিশন কর্তৃক বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে জনাব তারেক রহমানকে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত ঘোষনার সিদ্ধান্তকে এই কাউন্সিল সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করছে। এই কাউন্সিল পুনরায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসুরী, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক জনাব তারেক রহমানকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে।
৫। এই কাউন্সিল সর্বসম্মতভাবে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির অবশিষ্ট পদসমূহ পূরনের জন্য দলীয় চেয়াপার্সনকে সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করছে এবং সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে, তিনি এইসব পদে যাদেরকে মনোনীত করবেন তারা এই কাউন্সিলে নির্বাচিত বলে গন্য হবেন। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে কর্মকর্তাগণের নতুন পদ ও পদবী সৃষ্টি করার প্রেক্ষিতে কাউন্সিল দলীয় চেয়ারপার্সনকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে কর্তকর্তাগনের পদের তালিকা সংশোধন ও পুনঃবিন্যাসের ক্ষমতা অর্পন করছে।
৬। কাউন্সিলে দলীয় ঘোষনাপত্র ও গঠনতন্ত্রের যে সকল সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে তা এই কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করছে।
৭। ভিশন- ২০৩০
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষনে মাননীয় চেয়ারপার্সন ভিশন- ২০৩০-র যে রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন তার জন্য এই কাউন্সিল তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এই কাউন্সিল তাঁর উত্থাপিত ভিশন-২০৩০’এর রূপরেখার যুগোপযোগী, দূরদর্শী ও গঠনমূলক বিবেচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করছে এবং যথাশীঘ্র পূণাঙ্গ ও বিস্তারিত আকারে ভিশন- ২০৩০ দলীয় কর্মসূচী হিসেবে ঘোষনা করার জন্য দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
৮। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রসঙ্গে
লাখো শহীদের আত্মদান, মা-বোনের সম্ভ্রম আর সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ গভীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত। জনগণের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরন করে দেশে বেনামে একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছে। নির্দলীয়-নিরেপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান চালূ করে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারী ভোট ও ভোটার বিহীন তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমেগঠিত একটি অবৈধ সংসদ ও সরকার আজ রাষ্ট্রক্ষমতায়। নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানÑ নির্বাচন কমিশন গণবিচ্ছিন্ন সরকারের টিকে থাকবার নীলনকশা বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জণগনের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশবাসী অব্যাহত সংগ্রামে শামিল হয়েছেন। গণতন্ত্রের এই জাতীয় সংগ্রামে অসংখ্য মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছেন, গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী জোর জবরদস্তিমূলক ভাবে জণগনের দাবিকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য হত্যা-গুম-গ্রেফতার-মামলা-নির্যাতন-নিপীড়নের নিষ্ঠুর পথ বেছে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল দেশে বিরাজমান সংকটের আশু সমাধানের লক্ষ্যে গণদাবীর কাছে নতি স্বীকার করে একটি অর্থবহ কার্যকর জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অবৈধ সংসদ বাতিল করে, নির্দলীয় সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে জাতীয় সংসদের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েমের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে এই কাউন্সিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলমান জাতীয় সংগ্রামে সর্বশক্তি নিয়ে শামিল হওয়ার জন্য দল-মতনির্বিশেষে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।
৯। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে
এই কাউন্সিল দেশের ভেতরে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও জঙ্গিবাদের অশুভ তৎপরতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, এসব ঘটনায় বিরোধী দল-মতের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে জড়িত করে গ্রেফতার, মামলা, নির্যাতন হয়রানি করার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সরকার সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির দৃঢ় অবস্থান থেকে এই কাউন্সিল সরকারের আত্মঘাতি ও দেশবিরোধী তৎপরতার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিপদ মোকাবেলায় সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আহবান জানাচ্ছে।
১০। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রসঙ্গে
ক্ষমতাসীনরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তাঁর পরিবার এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তি ও জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কে ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের ও বিচারের নামে প্রহসন করে তাদেরকে সাজা দেওয়ার নীলনক্সা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই কাউন্সিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং প্রহসনমূলক বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য সরকারে প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে এই কাউন্সিল দেশবাসীকে এই হীন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদমুখর হওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।
১১। খুন-গুম-হামলা-মামলা-হয়রানি প্রসঙ্গে
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশব্যাপী পরিচালিত ন্যায়সংগত সংগ্রামকে ক্ষমতাসীনরা হত্যা, গুম, গ্রেফতার, মামলা, নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার নীতি গ্রহন করেছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসালাম হিরু ও চৌধুরী আলমসহ শত শত নেতা-কর্মী এই সময়কালে সরকারী বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন। অসংখ্য নেতা-কর্মী-সমর্থককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা ও আহত করা হয়েছে। বিএনপির অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহম্মেদকে ২ মাসেরও বেশী সময় গুম করে রাখা হয়েছিল। দারুন অসুস্থ অবস্থায় তাকে পাওয়া যায় ভারতের শিলং এর রাজপথে। তিনি এখনও সেখানে আইনী হেফাজতে চিকিৎসাধীন। ৩ মাস ধরে গুম করে রাখা হয়েছিল ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খোকনকেও। হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার-কারানির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সারাদেশে লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই কাউন্সিল সরকারের হত্যা-গুম, গ্রেফতার-মামলা, নির্যাতন নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে, নিখোঁজ নেতা-কর্মীদের সন্ধান এবং কারাগারে আটক বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, রাজশাহীর সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি.এম গউস সহ কারাগারে আটক সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছে। একই সাথে এই কাউন্সিল বিএনপিরজাতীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য জোর দাবি করছে।
১২। আইন শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে
বর্তমানে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। সা¤প্রতিক সময়ে খুন-অপহরণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে বাইরে কোথাও,এমনকি মায়ের পেটের শিশুও আজ নিরাপদ নয়। সরকারী দল ও সরকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নানা অপরাধ সংঘটনে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কোথাও কোথাও বেপরোয়া আচরণ করছে। তারা নিজেরাই খুন, অপহরন, চাঁদবাজি, মাদক ব্যবসা সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে জনমনে সৃষ্ট চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতংকের মধ্যে এই কাউন্সিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন, খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি বন্ধ, জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারে প্রতি জোর দাবীজানাচ্ছে। একই সাথে অপরাধী সে যেই হোক- তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে দেশে আইনের শাসন এবং জনমনে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করার জন্য এই কাউন্সিল জোর দাবি করছে।
১৩। সংবাদ মাধ্যম-মিডিয়া-সংবাদকর্মী প্রসঙ্গে
সা¤প্রতিক সময়ে দেশে সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়ার উপর সরকারী নিয়ন্ত্রন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সরকারের অযাচিত অন্যায় হস্তক্ষেপ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে আমার দেশ সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানকে, সরকারী ঘোষনাবলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেসরকারী টিভি চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামীক টিভি।এই কাউন্সিল সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়ার উপর সরকারী অন্যায় হস্তক্ষেপ বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে এবং বন্ধ ঘোষিত দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামীক টিভি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। এই কাউন্সিল অবিলম্বে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ইটিভি’র চেয়ারম্যান আবদুস সালাম সহ বন্দী সব সংবাদকর্মীর মুক্তি এবং সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার দাবি করছে। একই সাথে এই কাউন্সিল স্বাধীনভাবে সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্বপালন নিশ্চিত এবং মত প্রকাশের উপর সরকারী হস্তক্ষেপ বন্ধের জোর দাবি করছে।
১৪। শিশু-নারীর উপর সহিংসতা প্রসঙ্গে
দেশে শিশু খুন, অপহরণ, নারী নির্যাতন-ধর্ষন, শিশু ও নারীর উপর সহিংসতার নানা অপরাধের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্দ্বমান নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা, বিকৃতমানসিকতা, মাদকাসক্তি গোটা সমাজকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। সর্বত্র সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটেছে। এই কাউন্সিল শিশু ও নারীরপ্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ এবংএ ধরনের ঘৃন্য অপরাধের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহন ও আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারে প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে এই কাউন্সিল দেশবাসিকে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের সর্বগ্রাসী অবক্ষয় রোধে সোচ্চার হয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছে।
১৫। ভঙ্গুর প্রশাসন-পুলিশ-বিচারালয় প্রসঙ্গে
ক্ষমতাসীন সরকারের নির্লজ্জ ও নগ্ন দলীয় করনের ফলে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দলীয় করন, আত্মীয়করণ ও আঞ্চলিকরণের মাধ্যমে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থাকে সরকারী দলের অন্যায় সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নের যন্ত্রে পরিনত করার হীন প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে কেবলমাত্র অন্ধ দলীয় আনুগত্য না থাকার কারনে বহু মেধাবী, সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা যথাযথ নিয়োগ, পদোন্নতি না পেয়ে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। দলীয় বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ, সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা প্রদান, বিচারলয়ে সরকারী হস্তক্ষেপ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থায় সরকারী হস্তক্ষেপ বন্ধ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত, দলীয় করন- আত্মীয়করণ- আঞ্চলিকরণ বন্ধকরে মেধা ও যোগ্যতার বিচারে নিয়োগ-পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
১৬। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ, বেকারত্ব, দেশে-বিদেশে সংকুচিত শ্রমবাজার প্রসঙ্গে
এই কাউন্সিল দলীয় পরিচয় এবং অর্থের লেনদেনের ভিত্তিতে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগের অঘোষিত ব্যবস্থা বাতিল করে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাছ বিচার না করে কেবলমাত্র মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে এই কাউন্সিল সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশে বেকার যুবকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম বাজার রক্ষা ও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাস্তব সম্মত কুটনৈতিক তৎপরতা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-লবিংয়ের জোর দাবি জানাচ্ছে।
১৭। শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে
এই কাউন্সিল দেশে শিক্ষার সামগ্রিক মানের ক্রমাবনতি, বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষাঙ্গনের অশান্ত পরিবেশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের নিজেদের অভ্যন্তরীন বিরোধ, হল দখল, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজী ইত্যাদির জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যাকান্ডের একাধিক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, শিক্ষকদের লাঞ্চিত করা হয়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নির্লজ্জ দলবাজি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাবমুর্তিকে ক্ষুন্ন করছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি শিক্ষার মান রক্ষায়, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল প্রতিরোধে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দলবাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। এই কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করার জন্যও জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে এই কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সহ সকল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনকে অবাধে তাদের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
১৮। স্থবির ব্যবসা-বানিজ্য-অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতে চুরি-লুটপাট প্রসঙ্গে
ক্ষমতাসীন সরকারের অপশাসন, ব্যর্থতা, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সরকারী দলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে দেশের ব্যবস্য-বাণিজ্য-অর্থনীতিতে স্থবিরতা, দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস, শিল্প কারখানা বন্ধ, শেয়ার বাজারে কেলেঙ্কারী, ব্যাংকিং খাতে লুটপাট ও চরম অব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল অংকের রিজার্ভ মানি চুরি হয়ে যাওয়ার নজির বিহীন ঘটনায় এই কাউন্সিল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই কাউন্সিল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শেয়ার বাজার ও ব্যাংকিং খাত ব্যবস্থাপনায় সরকারী ব্যর্থতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। এই কাউন্সিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ মানি চুরির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তকরে এর সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করছে। একই সাথে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাস বন্ধ করে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
১৯। সকল ধর্ম ও স¤প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রসঙ্গে
এই কাউন্সিল সা¤প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ধর্মীয়সম্প্রদায়ের মানুষের উপরে হামলা, তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুরোহিত-যাজকদের উপর হামলা এবং তাদের প্রাননাশের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সরকারী দলের নেতারাই বিভিন্ন স্থানে অন্য স¤প্রদায়ের ব্যক্তিদের জায়গা-জমি-ব্যবসা-সম্পত্তি বেদখল করছে। এই কাউন্সিল সকল স¤প্রদায়ের মানুষ এবং তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে দেশে সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে।
২০। কৃষি ও কৃষক
এই কাউন্সিল গভীর উদ্বেগের লক্ষ্য করছে যে, সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারনে দেশের কৃষকসমাজ আজ দিশেহারা। সার-বিদ্যুৎ-ডিজেল-কীটনাশক সহ কৃষি উপকরণের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি এবং কৃষিঋণের সুদ বৃদ্ধির কারনে ধান সহ কৃষি পন্যের উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলেও কৃষক তার উৎপাদিত ধান ও কৃষি পন্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই কাউন্সিল সার-বিদ্যুৎ-ডিজেল-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস, কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুর্কি প্রদান, সহজ শর্তে পর্যাপ্ত সুদমুক্ত কৃষি ঋনের ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি ধানসহ উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
২১। দ্রব্য মূল্য ও জনজীবনে সংকট প্রসঙ্গে
এই কাউন্সিল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি এবং বাজার নিয়ন্ত্রন ও জনজীবনে সৃষ্ট দুর্ভোগ লাঘবে সরকারী ব্যর্থতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং অবিলম্বে বাজার মূল্য জনগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম রোধ ও বাজার নিয়ন্ত্রনকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। এই কাউন্সিল গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট নিরসন ও যানজটের হাত থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
২২। গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস প্রসঙ্গে
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বিপুলভাবে হ্রাস পেলেও দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে দফায় দফায় তেল-বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করায় এই কাউন্সিলক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং অবিলম্বে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করে গ্যাস-বিদু্যুতের মূল্য ও পরিবহন ভাড়া কমানোর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে বিদ্যুৎসহ সকল সেবা খাতে দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধকরে জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির কার্যকর পদেক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারে প্রতি জোর দাবি করছে।
২৩। আন্তর্জতিক প্রসঙ্গে
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও নিরবিচ্ছিন্ন উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি। বিএনপি বরাবরই সকল আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এই কাউন্সিল সব ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উত্তেজনা প্রশমনে এবং শন্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্বÑবিএনপি তার এই বিঘোষিত নীতি ও অবস্থানে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সকল দেশ ও জাতির সঙ্গে সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে সৌহার্দপূর্ন ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট রাখতে আগ্রহী। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সাথে ভ্রাতৃত্বসুলভ সৌহার্দ বজায় রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিকট প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্ককে আরও কার্যকর, বিশ্বশান্তি রক্ষা ও রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং ওআইসিকে এই কাউন্সিল আরও কার্যকর দেখতে চায়। এই কাউন্সিলভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ বিগ্রহের কারনে জীবন রক্ষায় স্বদেশ ভূমি ছেড়ে উদ্বাস্তু হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশুর ইউরোপ অভিমুখে যাত্রার কারনে বিভিন্ন দেশের সীমান্তে ও সাগরবক্ষে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়কর পরিবেশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বিশ্ব স¤প্রদায়কে সম্পূর্ন মানবিক কারনে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছে। এই কাউন্সিল প্যালেস্টাইনের স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার ন্যায় সংগত সংগ্রামের প্রতি বিএনপির সমর্থন পুনঃব্যক্ত করছে।
এই কাউন্সিল দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত ভারতের সাথে বাংলাশের স্থল চুক্তি বাস্তাবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করছে এবং তিস্তাসহ অভিন্ন নদীসমূহে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত, দুই দেশের ব্যবসা-বানিজ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ, চোরাকারবারী ও মাদক পাচার রোধসহ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত সমাধান করে বন্ধুত্বপূর্ন ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ককেআরোও জোরদার করার জন্য আহবান জানাচ্ছে।
২৪। জলবায়ু ও পরিবেশ প্রসঙ্গে
এই কাউন্সিল আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জলবায়ুর পরিবর্তন জণিত কারনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশের সম্ভাব্য ক্ষতির মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্ব জনমত গঠন ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহনে তার অঙ্গীকার ঘোষনা করছে। পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এই কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দাবি জানাচ্ছে। এই কাউন্সিল সুন্দরবনসহ জাতীয় ঐতিহ্যসমূহ সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন এবং সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য হুমকির কারন হতে পারে এমন যে কোন পদক্ষেপ গ্রহন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।
২৫। দলে তারুণ্য ও মেধার গুরুত্ব বৃদ্ধি ও মুক্ত চিন্তা চর্চা প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ব্যপক অংশ তরুণ। আধুনিক বিশ্বে এই তরুণদের এড়ষড়নধষ ণড়ঁঃয বলা হয়। বিএনপি রাজনীতিতে জ্ঞান ও মেধার চর্চার মধ্য দিয়ে এই তরুণ সম্প্রদায়কে দলের মূলধারায় অধিকতর সম্পৃক্ত করতে চায়। এই কাউন্সিল আধুনিক বিশ্বের উপযোগী তারুণ্য ও মেধা নির্ভর একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে বিএনপি গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করছে।
এই কাউন্সিল গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, মেধা ও মননের বিকাশ এবং মুক্ত চিন্তা চর্চার মধ্য দিয়ে বিএনপি’কে ভবিষ্যতের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।