খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৬: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা তাঁর এখতিয়ারবহির্ভূত। তিনি পার্টিকে কারও ‘একক সম্পত্তি বা কোনো কম্পানি নয়’ বলে সংগঠনকে হেয় করেছেন। আজ সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এরশাদ এসব কথা বলেন।
গতকাল রবিবার বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদকে গণতান্ত্রিক হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট ‘বিভ্রান্তি দূর করতে’ এরশাদ এই বিবৃতি দেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
গণতান্ত্রিক হওয়ার জন্য স্ত্রীর আহ্বানের জবাবে এরশাদ বিবৃতিতে বলেন, রওশন এরশাদ কোন গণতন্ত্র অনুসারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানালেন, তা স্পষ্ট করে বলুন? দল ভাগ করা কিংবা উপদল সৃষ্টি করা কি দলীয় গণতন্ত্রের আওতায় পড়ে? তাঁকে বলতে হবে এ পর্যন্ত কোনটা দলীয় গঠনতন্ত্রের বাইরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
রওশনের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতাকে মনে রাখতে হবে যে সংসদীয় দল পার্টির একটি শাখা মাত্র। এই শাখার দায়িত্ব পার্টির নীতিমালা অনুসারে শুধু সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার ফোরাম হচ্ছে পার্টির প্রেসিডিয়াম। সুতরাং রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এই ফোরামে এটা তাঁর এখতিয়ারবহির্ভূত। তিনি পার্টিকে কারও ‘একক সম্পত্তি বা কোনো কম্পানি নয়’ বলে সংগঠনকে হেয় করেছেন।
এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি একটি গঠনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই গঠনতন্ত্র কোনো বিশেষ ব্যক্তির আরোপিত বিষয় নয়।
গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারায় দেওয়া চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতার বিষয়ে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার সৃষ্টি করা নয়। এটা জাতীয় কাউন্সিলে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি ধারা। এই ধারা সম্পর্কে পার্টির কারও কোনো আপত্তি থাকলে, তা শুধু জাতীয় কাউন্সিলে উত্থাপন করা যেতে পারে। কাউন্সিল ভোটের মাধ্যমে এই ধারা বাতিল বা বহাল রাখার রায় দিতে পারে। তার আগে, যা গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটাকে “অগণতান্ত্রিক” ধারা বলাটাই দলীয় গণতন্ত্রকে অবমাননা করা। এই ধারাবলে রওশন এরশাদকেও দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
রওশনের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ৩৯ ধারা যখন কারও পক্ষে যায়, তখন এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী ধারা হয়ে যায়। আর যখন ব্যক্তিস্বার্থের বিপক্ষে যায়, তখন এটা ‘অগণতান্ত্রিক’ হয়ে পড়ে-এই মানসিকতা থাকা উচিত নয়।
কাউন্সিলের বিষয়ে রওশনের বক্তব্যের জবাবে এরশাদ বলেন, কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। নির্বাচন কমিশন থেকে দুবার সময় নেওয়ার পর, সবার মতামতের ভিত্তিতে দুবার তারিখ পরিবর্তনের পর প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।
নেতাদের দল ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রওশনের বক্তব্যের পাল্টা জবাবে এরশাদ বলেন, যে নেতারা দল ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো দল থেকে জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন। এসব দলের ভুলের কারণেই কি তাঁরা দল ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন? জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল এবং তাঁরা যখন উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, বা মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন, তখন মনে হয় দলের কোনো ভুল ছিল না। যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখনই যেন পার্টির ভুল হয়ে গেল! আর তাঁরা সুবিধার লোভে অন্য দলে চলে গেলেন। এই সুবিধাভোগী নেতাদের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা কীভাবে গ্রহণ করবেন?