Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

maguraখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০১৬: আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজার : আজ ১৪ জুন, ফিরে এসেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জবাসীর ভয়াল স্মৃতির দিন মাগুরছড়া ট্রাজেডির ১৯তম বার্ষিকী। এ দিনটি আসলেই মৌলভীবাজার জেলাবাসীকে মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াল স্মৃতির কথা। সেদিন মানুষের মন কত ভীত ছিল। কখন এসে আগুনের লেলিহান শিখায় গ্রাস করে ফেলবে।১৯৯৭ সালের এইদিন মধ্যরাতে মাগুরছড়ার ১নং অনুসন্ধান কুপ খননকালে হঠাৎ করে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ঘটে। গ্যাসকুপে বিষ্ফোরণে মুহুর্তে আগুনের লেলিহান শিখা হয়ে উঠে উর্ধমুখী। মার্কিন কো¤পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজার স্ট্রাকচার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি স¤পদ, রাস্তা মারাÍকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিষ্ফোরিত আগুনে গলে যায় রেলপথ, জ্বলে ছারখার হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার বনজ স¤পদ। মারা যায় হাজার হাজার বন্যপ্রানী ও পাখী। সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মানুষ। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মাগুরছড়া গ্যাস কুপে মার্কিন বহুজাতিক কো¤পানী অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও ত্র“টির কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়।ভয়াবহ মাগুরছড়া গ্যাসকুপ বিষ্ফোরণের পর পরই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তৎকালীন জালানী মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জ্বালানী ও খনিজ স¤পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষ্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের ব্যর্থতার জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন অভিমত প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ। তাদের কাছে অক্সিডেন্টালের ১৫/১৬ টি ত্র“টি ধরা পড়ে। মার্কিন কো¤পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজার স্ট্রাকচার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি স¤পদ, রাস্তা মারাÍকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮শত ৫৮ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। এসময় ছোট বড় ২৯টি চা বাগানের ৪৬ কোটি ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৩০টাকা ক্ষতি সাধিত হয়। তাছাড়া বনাঞ্চলের ৬৯.৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণ বয়স্ক গাছ আগুনে পুড়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৩৩.৬১ কোটি টাকার। বিশেষজ্ঞদের মতে একটি বনের স্বাভাবিক উচ্চতার গাছ বাড়তে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ৬০ বছর, এবং স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে কমপক্ষে ১১০ বছর সময় প্রয়োজন। প্রতি বছর ৮০.৩০ কোটি টাকা হিসাবে ১১০ বছরে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮,৮৩৯ কোটি টাকা। বনাঞ্চলের আংশিক ক্ষতির পরিমাণ ৮,১০০ গাছ এবং ২২.৫০ হেক্টর ভূমি। উল্লেখিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০ বছর সময় দরকার।তদন্তে ক্ষতি বাবদ ধরা হয় ৫০৭.১২ কোটি টাকা। এছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫,৪৫০ টি বৃক্ষ। ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার পেতে ১০ বছরে ক্ষতির পরিমান ৪৮৪.৫৮ কোটি টাকা। বিস্ফোরণের ফলে ২ হাজার ফুট রেলওয়ে র্ট্যাক ধক্ষংস হয়েছে, এতে ক্ষতি হয়েছে ৮১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা (রাজস্ব ব্যতীত)। সড়ক পথের ক্ষতি ২১ কোটি টাকা। গ্যাস পাইপ লাইনের ক্ষতি ১৩ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯১৮৬ টাকা। খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজ সমূহ প্রতিদিন ৪৭,৭৫০ টাকা হারে মোট ১২ লক্ষ টাকা।ভয়াবহ মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ–গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস বিনষ্ট হয়। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ–গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাসের তৎকালীন মুল্য ৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশী টাকায় মাগুরছড়ার মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বলে তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষনে জানা গেছে। গ্যাস বিস্ফোরনের পর অক্সিডেন্টাল তাদের সহোদর ইউনোকলের কাছে দায়িত্ব দিয়ে এ দেশ ত্যাগ করলে দুই বছর পর ফুলবাড়ি চা বাগান, পার্শ্ববর্তী মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাড়ি-ঘর, পান জুম এলাকার ক্ষয়ক্ষতি বাবদ আংশিক টাকা প্রদান করে ইউনোকল। অন্যদিকে দূর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়ক ধারে সামাজিক বনায়নের রোপিত গাছের জন্য ৩ ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ ৬ মাস কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতি পূরণ বাবত বাস মালিক সমিতিকে ২৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে কিছু ক্ষতিপুরন দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ও গ্যাস বাবত কোন ক্ষতিপূরণ করা হয়নি এবং কোন সরকারই ক্ষতিপূরণ আদায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জনমনে সন্দেহ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে আলাপকালে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সোমবার সন্ধ্যায় এ প্রতিনিধিকে জানান, আমার কাছে ক্ষতিপূরণের কোন আবেদন অপেক্ষমান নেই। যেগুলো এসেছিল তাদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিপূরণের জন্য কেউ আমার কাছে কেউ আসেনি।এদিকে মাগুরছড়া র্ট্যাজেডির ১৯ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৪ জুন মঙ্গলবার কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদ এর উদ্যোগে সকাল ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে মাগুরছড়া গ্যাস বিষ্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কমলগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবীতে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসুচী পালিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করবে।মাগুরছড়ার গ্যাস স¤পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটির সাধারণ স¤পাদক বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, মাগুরছড়া ব্লে¬া-আউটে গ্যাস স¤পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা মার্কিন বহুজাতিক কো¤পানি অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আমারা ১০ দফা দাবীতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। আর এ লক্ষ্যে আজ ১৪ জুন সকাল ১০টায় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনাতে মানববন্ধন সমাবেশ শেষে শ্রীমঙ্গলের ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।