খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০১৬: ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রশিবির কর্মীরা সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিং ঘটাচ্ছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম। এসব হত্যাকান্ডের অর্থদাতা হিসেবে কাজ করছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পরিবার ও জামায়াত-বিএনপিপন্থী অর্ধশত ব্যবসায়ী।
বুধবার মাদারীপুরে সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও পুরোহিত রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলা করে জঙ্গিরা। ওই সময় হাতেনাতে আটক হওয়া গোলাম ফায়জুল্লাহ্ ফাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি মনিরুল ইসলামের। এর আগে নানা সময়ে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন জঙ্গিও জিজ্ঞাসাবাদে একই তথ্য দিয়েছিল বলেও জানান তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিং হচ্ছে। তারা প্রাথমিকভাবে পুরোহিত, ধর্মগুরু, যাজকসহ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শতাধিক ব্যক্তিকে টার্গেট করেছে। এছাড়া বিদেশী নাগরিক ও প্রগতিশীল লেখক, বুদ্ধিজীবীও তাদের টার্গেটে রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর মোসাদ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য স্লিপার সেলের সদস্যরা তিন লাখ টাকা করে পাচ্ছে। যার মধ্যে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম এবং বাকি দেড় লাখ টাকা কিলিং মিশন বাস্তবায়নের পর দেয়া হচ্ছে। কেউ হত্যাকান্ড ঘটানোর সময় ধরা পড়লে কিংবা মারা গেলে তাদের পরিবারকে মোটা অংকের অর্থ দেয়া, পরিবারের ভরণপোষণের প্রতিশ্র“তিও দেয়া হচ্ছে। আর কেউ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হচ্ছে জামিন করানোর প্রতিশ্র“তিনামাও।
না প্রকাশ করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, মাদারীপুরে আটক ফায়জুল্লাহ ছাত্র শিবিরের কর্মী। পাশাপাশি ছাত্র শিবির পরিচালিত কোচিং সেন্টার রেটিনার ফার্মগেট শাখায় তার যাতায়াত ছিল। বৃহস্পতিবার অভিযান চালানো হয় দক্ষিণখানে ফাইজুল্লাহর বাসা, উত্তরখানের দুটি মেস ও রেটিনায়। এ সময় রেটিনা কার্যালয় থেকে দুটি ল্যাপটপসহ বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও মেস ও ফায়জুল্লাহর বাসা থেকেও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ফায়জুল্লাহ্ জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারিয়াপুর। ২২ বছর ধরে তার পরিবার ঢাকায় থাকে। সে ঢাকার উত্তরার একটি কলেজের এইচএসসিতে পড়ছে।
জানা গেছে, ফায়জুল্লাহ বাবা গোলাম ফারুক একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা, মা কামরুন নাহার গৃহিনী। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে দক্ষিণ খানের ফায়েদাবাদ এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তারা। ১২ জুন বাসা থেকে বের হয়ে যায় ফায়জুল্লাহ্। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে বাবা গোলাম ফারুক দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করেছিলেন। তবে কেন ফাহিম মাদারীপুর গেলেন, সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি। ১৮ বছরের ফাহিম উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে রসায়ন বিজ্ঞানের পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি।
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের সামনে কলেজের প্রভাষক রিপন চক্রবর্ত্তীর নিজ ভাড়া বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তা। এ সময় প্রভাষকের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে পালিয়ে যাবার সময় গোলাম ফাইজুল্লাহ্ ফাহিম নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়।