খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১৬ চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে কলেজছাত্র হিমাদ্রী মজুমদার হিমুকে হত্যার আলোচিত মামলার রায় হবে আগামী ২৮ জুলাই।
শনিবার চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের এই দিন ঠিক করেন।
মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে জামিনে থাকা শাহ সেলিম টিপু ও শাহাদাত হোসেন সাজুর জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
আসামিদের জাহিদুর রহমান শাওন এবং টিপুর ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ পলাতক। অন্য আসামি মাহবুব আলী ড্যানি কারাগারে রয়েছেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অনুপম চক্রবর্ত্তী বলেন, তারা শনিবার শুনানিতে হত্যার কারণ, ঘটনাস্থলের সাক্ষী ও হিমুর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
“এরপরই আদালত মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৮ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন। দুই আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠাতে আবেদন করলে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।”
অনুপম চক্রবর্ত্তী বলেন, “আদালতে বলেছি, এটি একটি ব্যতিক্রমী মামলা। কুকুল লেলিয়ে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা বাংলাদেশে কখনোই ঘটেনি।
“শুধু নিহতের পরিবার নয় সাধারণ মানুষও এ মামলার রায়ের অপেক্ষায় আছে। দোষীদের দৃশ্যমান সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।”
হিমুর বাবা প্রবীর মজুমদার আদালতে বলেন, “মামলার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি শুনানির দিনে আমি আদালতে এসেছি। রায় ঘোষণার দিন ধার্য হওয়ায় আমি খুশি। ছেলের খুনিদের সর্বোচ্চ সাজাই আমি চাই।”
২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় টিপুর বাড়ির ছাদ থেকে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় হিমুকে। ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ২৩ মে তার মৃত্যু হয়।
হিমু খুনের ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর অভিযোগ গঠনের শুনানি চারবার পিছিয়ে ২০১৪ সালের বছরের ৩ ফেব্র“য়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৪ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১৪ অক্টোবর ও এ বছরের ৩০ জুন আদালতে বাজিয়ে শোনানে হয় মৃত্যুর আগে হাসপাতোলে দেওয়া হিমুর বক্তব্যের রেকর্ড।
ওই রেকর্ডের বরাত দিয়ে আইনজীবী অনুপম জানান, ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সড়কে আসামি শাহাদাত হোসেন সাজু মাদক সেবন করছিল।
“এসময় হিমু ও মাদকবিরোধী সংগঠন শিকড়ের সদস্যরা সাজুকে বাধা দিলে ঘটনাস্থলে এসে সাজুর পক্ষ নিয়ে হিমু ও অন্যদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় আসামি শাহ সেলিম টিপু।”
আদালতে শোনানো রেকর্ডের তথ্য অনুসারে- ঘটনার দিন পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে হিমুকে ধরে নিয়ে যায় আসামি শাওন, রিয়াদ, সাজু ও ড্যানি।
“আসামিরা বিষয়টি ফোনে টিপুকে জানালে তিনি হিমুকে তার বাড়ির ছাদে নিয়ে বেঁধে রাখতে বলেন। সেখানে আটকে রেখে হিমুকে মারধর করা হয়। এরপর কুকুর লেলিয়ে ভয় দেখিয়ে এবং সবশেষে ধাক্কা দিয়ে তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়।”
মৃত্যুর আগে হিমুর দেওয়া এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে আদালতে জবানবন্দিও দেন তার বাবা প্রবীর মজুমদার।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যুক্তি উপস্থাপন।রাষ্ট্রপক্ষ এক মাসে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলেও আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনে প্রায় নয় মাস সময় নেয়, যা নিয়ে অসন্তোষ জানায় বাদী পক্ষ।