খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০১৬: মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণসহ পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বহী কমিটি (একনেক)।
এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৭৪ কোটি ৩১ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
রাজধানী শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল ইসলাম ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, দেশের সবগুলো বিভাগীয় অফিস যেন একই রকমভাবে নির্মাণ করা হয়, সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া রংপুর বিভাগীয় অফিসে অডিটরিয়াম ১০ তলায় না করে নিচ তলা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজেই নিচে নামতে পারেন। এছাড়া ঢাকা সেনানিবাসে ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টোলিজেন্স এর অফিসার্স মেস কমপ্লেক্স ও বাসস্থান নিমৃাণ প্রকল্পটি ১৪ তলা ফাউন্ডেশন হলেও সেটি সাত তলা পর্যন্ত বিল্ডিং করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পুকুর, দীঘি জলাশয়সমূহ পুন:খনন সংস্কার প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেঘাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভুমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
রুপগঞ্জ জলসিড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ঢাকা সেনানিবাসে ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর জন্য আনুষঙ্গিক কাজসহ অফিসার্স মেস কমপ্লেক্স ও বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি।
মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার দেশের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে ২০১০ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এই মাস্টার প্ল্যানে গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লাকে প্রধান জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে জ্বালানি বহুমুখীকরণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায়, ২০৩০ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫০ শতাংশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইজিসিবি লিমিটেড মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক সুপার ক্রিট্রিক্যাল টেকনোলজির বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশগত প্রভাব নিরুপনের জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ৩০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারী যন্ত্রপাতি ও পরিচালনে প্রয়োজনীয় কয়লা পরিবহনে সুবিধাজনক হবে। প্রস্তাবিত ৩০০ একর ভূমিতে বয়লার, টারবাইন, চিমনী, পানি শোধনাগার এবং বার্জ হতে কয়লা মজুদ ব্যবস্থাপনার জন্য জেটি ইত্যাদি স্থাপনাসম্পন্ন অধিক দক্ষতার ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট সুপার ক্রিট্রিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হবে।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, ৩০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৫০টি পরিবার প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং পরামর্শক সেবা প্রদান করা।