
শনিবার অসলোতে সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকালে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোর্জ ব্রেনডিওন বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করেছে।’
স্টকহোমে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সরওয়ার যিনি নরওয়েরও দায়িত্বে নিয়োজিত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউরোপ) মোহাম্মদ খোরশেদ এ খাস্তগীর এবং বাংলাদেশে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেটে লুন্দুমওয়ার আলোচনাকালে উপস্থিত ছিলেন।
গতরাতে এখানে পাওয়া এক বার্তায় বলা হয়, শনিবার নরডিক অঞ্চলের চার দেশ সফরের অংশ হিসেবে মাহমুদ আলী অসলো পৌঁছেছেন এবং তিনি নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেন।
প্রায় এক দশক পর দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
মাহমুদ আলী সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈশ্বিক এ হুমকির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ঢাকার গুলশান ক্যাফে ও কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে সন্ত্রাসী হামলার উদ্ধৃতি দিয়ে নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার গত দুই মাসে অনেক কিছু করেছে। তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।
গুলশান ক্যাফেতে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানির ক্রমবর্ধমান আগ্রহে সন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি মত প্রকাশ করেন, অফশোর তেল ও গ্যাস, জাহাজ নির্মাণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, আইসিটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ব্লু ইকোনমির মত বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে পারস্পরিক লাভজনক যৌথ উদ্যোগ ও ব্যবসায়ী সুযোগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক পরিবর্তনশীল ২০৩০ আলোচ্যসূচির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কিভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই ঐতিহাসিক বৈশ্বিক উদ্যোগের পারস্পরিক সামগ্রিক সুবিধা নিতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোর্জ ব্রেনডিওনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং ১৯১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশ সফরে সম্মত হন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিনরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিশ্বে টেলিনরের জোরালো অবস্থান রয়েছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারের মালিক নরওয়ে সরকার।
গ্রুপ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী সিগভে ব্রেক্কি বাংলাদেশের টেলিনরের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের ব্রিফ করেন।
ব্যাপকমাত্রায় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কাটেক বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সৌর স্থাপনা থেকে প্রায় ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তাবিত ৮০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা মাহমুদ আলীর সামনে উপস্থাপন করে।
স্কাটেক’এর সিইও রেমন্ড কার্লসেন জানান, তারা আজ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আলী নরওয়েতে বসবাসরত বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গতকাল স্থানীয় একটি হোটেলে একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার দুই দিনের সফরে ডেনমার্কের উদ্দেশ্যে নরওয়ে ত্যাগ করেন। তিনি বুধবার আইসল্যান্ড এবং বৃহস্পতি ও শুক্রবার সুইডেন সফরে যাবেন।
এ সময় তিনি ওইসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।