Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

57খোলা বাজার২৪,বুধবার,০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়কর নেওয়া ‘অবৈধ’ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি করে চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বুধবার এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
যে দুই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় করে আসছিল, সেগুলো অবৈধ ঘোষণা করে গত সোমবার রায় দেয় হাই কোর্ট।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬টি রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
পাশাপাশি ওই দুই প্রজ্ঞাপনের আওতায় যে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এনবি আরকে।
এর মধ্েয নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়; ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক; ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজি; আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি; ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চিটাগাংয়ের ২৫টি রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, শাহ মোহাম্মদ আশিকুল মোরশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর।
এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস; ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি; সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি; ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; ইন্ডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির পক্ষে বাকি রিট আবেদনগুলো করা হয়।
২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বল হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করা হল।
“মেডিকেল, ডেন্টাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্য শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রাইভেট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আয় করমুক্ত হইবে। কিন্তু ওই সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যথারীতি নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতসহ আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে।”
২০১০ সালের ১ জুলাই এনবি আরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কেবলমাত্র তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হল।
হাই কোর্টের রায়ের পর আইনজীবী সাখাওয়াত বলেন, দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনে কর কমানোর কথা বললেও মূলত এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক কলেজের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে।
“আদালত এই দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি এই দুই প্রজ্ঞাপনে দেওয়া ক্ষমতায় যে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে বলেছে।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর সেদিন বলেন, “দুটি প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। প্রথম আদালত ওই দুই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে রুল দেয়। সেই রুল এবসোলিউট করে দিয়েছে।”
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে বিস্তারিত বোঝা যাবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
এই রায়ের বিষয়ে সাখাওয়াত অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেদিন বলা হয়, আদালত তার পর্যবেক্ষণে সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে জীবনের অধিকারের কথা বলেছে, যার মধ্যে শিক্ষার অধিকারও পড়ে।
“গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার উঠতি নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। এখন সরকার যদি এই সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্যাক্স আরোপ করে, তাহলে তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে দেবে।
“এটা সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের চূড়ান্ত ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এটা অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।”
সরকার এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলেও গতবছর টানা কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তা প্রত্যাহার করে নেয়।