খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬: টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সরকারদলীয় এমপি আমানুর রহমান খান রানার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার এমপি আমানুরের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। সংসদ থেকে তাকে অধিবেশনে যোগদানের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি যাতে সংসদ অধিবেশনে অংশ নিতে পারেন সেজন্য জামিন প্রয়োজন।
শুনানি শেষে বিচারক দ্বিতীয় দফায় আমানুরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলেন।
২২ মাস পলাতক থাকার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর এই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি আমানুর।
আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
জামিন আবেদনের শুনানিতে সরকারপক্ষে পিপি আলমগীর খান মেনু ও আসামিপক্ষে আইনজীবী আবদুল বাকি, অ্যাডভোকেট লিটনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।
পরে তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার পর প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করেন। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে এ মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় যে, এমপি রানা ও তার তিন ভাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের নির্দেশেই অন্যান্য আসামি ফারুককে গুলি করে হত্যা করে বাসার কাছে ফেলে রাখে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী থেকে ফারুক আহমেদকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলেছিলেন রানা। কারণ তার ছোট ভাই টাঙ্গাইল পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি) ছিলেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ চলতি বছরের ৩ ফেব্র“য়ারি এই মামলায় অভিযোগপত্র দায়ের করে। আদালত এপ্রিল মাসে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রে আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ মোট ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এমপি আমানুর রহমান খান রানার অপর তিন ভাই হলেন- টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা)।
এছাড়া হত্যা মামলার বাকি ১০ আসামির মধ্যে রয়েছেন- এমপি আমানুর রহমান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির হোসেন, আনিছুল ইসলাম (রাজা), মোহাম্মদ আলী, সমীর ও ফরিদ আহমেদ, দারোয়ান বাবু, যুবলীগের তৎকালীন নেতা আলমগীর হোসেন (চাঁন), নাসির উদ্দিন (নুরু), ছানোয়ার হোসেন ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মাছুদুর রহমান।
এর মধ্যে আলী, সমীর, ফরিদ ও আনিছুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
পরে বিচারিক হাকিম আদালত এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ পলাতক ১০ আসামির বিরুদ্ধে হুলিয়া ও ক্রোক পরোয়ানা জারি করেন। তাদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়। চলতি বছরের ২০ মে রানা এমপিসহ সব আসামির বাড়ির মালামাল ক্রোক করে ডিবি পুলিশ।