Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

narsingdi-photo-21খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬: নরসিংদী থেকে তোফাজ্জল হোসেন।। নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির প্রায় ২ দিন পর নিখোঁজ ৪ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে মেঘনা নদীর নিলক্ষা এলাকায় থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ বাহেরচরের আনোয়ার ফরাজী, আব্দুল্লাহপুরের আবদুল হক, ফরিদ মিয়া ও মেহেরনগরের খলিল মিয়ার লাশ বাড়িতে পৌছার পর স্বজনদের আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ৈ উঠে। বুধবার প্রচন্ড ¯্রােত আর ঢেউয়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সারাদিন খুজাখোজি করেও তাদের লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিলক্ষা এলাকায় লাশ ফুলে ভেসে উঠলে টহলরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদেরকে উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঝড়ের কবলে পড়ে রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বেলোয়ারচর আনন্দবাজারের পাশ্ববর্তী মেঘনা নদীতে ট্রলারটি ডুবে যায়।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানায়, সন্ধ্যায় বি-বাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বাইশমৌজা গরুর বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা মাঝি গোলাম মিয়ার ট্রলার যোগে রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি আসছিলেন। পথিমধ্যে বেলোয়ারচর আনন্দবাজারের পাশ্ববর্তী মেঘনা নদীতে ট্রলারটি ঝড়ের কবলে পড়ে। আতংকে যাত্রীদের ছুটাছুটিতে ট্রলারটি কাত হয়ে ডুবে যায়। ওই সময় ট্রলারে থাকা অধিকাংশ গরু ব্যবসায়ীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ৪ জন নিখোঁজ হয়। ট্রলারে থাকা ১৫টি গরু ও মহিষ পানিতে ডুবে মারা যায়।
স্থানীয় লোকজন প্রথমে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে সকালে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৬ সদস্যের ডুবুরি দল নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানায়, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারটিতে ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ ও ২০টি গরু ও মহিষ ছিল।
সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেহান উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ও রায়পুরা থানা ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল অনুদান দেয়া হবে।
ছেলের লাশ দেখে বাকরুদ্ধ নিহত আনোয়ার ফারাজির বৃদ্ধা বাবা আব্দুল হক ফরাজি বলেন, ট্রলারের সবাই বেঁচে ফিরে আসছে। কিন্তু আমার বাবা তো ফিরেনাই। এখন তার ছোট ছেলে মেয়ে গুলো কাকে বাবা ডাকবে ?
ডুবে যাওয়া ট্রলারের যাত্রী মোমেন ফরাজি বলেন, চখোর সামনে আমার ভাই ডুবে গেল। কিছুই করতে পারিনি। প্রচন্ড ঢেউয়ে তাকে দুরে ঠেলে নিয়ে গেল । শত চেষ্টা করেও তাকে বাচাঁতে পারিনে।
শুধু বাহেরচরের আনোয়ার ফরাজীর বাড়িতেই নয়। কান্নার রোল, আব্দুল্লাহপুরের আবদুল হক, ফরিদ মিয়া ও মেহেরনগরের খলিল মিয়ার বাড়িতে। প্রিয় মানুষের মরদেহ কাছে পেয়ে আত্মনাদের পরিমান বেড়ে যায় কয়েক গুন। নিহতের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ। শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রাম জুড়ে।
স্বামীর লাশ পেয়ে সঙ্গাহীন হয়ে পরে বাহেরচরের খলিল মিয়ার স্ত্রী। চোখে মুখে জল ছিটে দিয়ে জ্ঞান ফিরোনোর চেষ্টা করছে স্বজনরা। জ্ঞান ফিরতেই আবার আর্তনাদ। আমার স্বামীকে ফিরেয়ে দাও। সর্বনাশা মেঘনা আমার স্বামীকে খেয়ে ফেলেছে। আমি এখনর কি নিয়ে বাচবো।
ফায়ার সার্ভিসের উপ মহা-ব্যবস্থাপক কাজী নাজমুজ্জামান জানান, সকালে নিলক্ষা সহ কাছাকাছি বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সকাল ৮টার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে নিহতদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।