Tue. Oct 21st, 2025
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ : পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নে সুদখোর মহাজনদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়ে ও তাদের প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেছেন আব্দুল খালেক (২৬) নামের এক ভ্যান চালক।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) পঞ্চগড় থানায় ওই ভ্যান চালকের স্ত্রী মহিদা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এর আগে ২৬ অক্টোবর আব্দুল খালেক বিষপানে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে (রমেক) মারা যান। তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের কেকুপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।

অভিযুক্তরা হলেন, সদর উপজেলার চালকলাহাট ইউনিয়নের ভান্ডারু গ্রাম এলাকার ফিজারের ছেলে সুরুজ্জামাল (৪৫), কেকুপাড়া এলাকার তালেবের ছেলে মো. ফোজু (৪০), খইচালের ছেলে মো. তাহেরুল (২৭), ও নরম মিয়ার ছেলে মো. ছয়ফুল (২৫)।
এদিকে মামলা দায়েরের পর পরই স্থানীয় এলাকাবাসী কেকুপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-চাকলাহাট সড়কে অভিযুক্ত সুদখোরদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মানববন্ধনে ওই এলাকার কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

মামলার এজাহার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, ৩/৪ মাস আগে আব্দুল একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫২ হাজার টাকায় একটি ব্যাটারি চালিত ভ্যানটি ক্রয় করেন।

এর পর অভাবী সংসারের প্রয়োজনে ওই ভ্যান চালক স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ী সুরুজ্জামালের কাছে ২ হাজার এবং ছয়ফুলের কাছে ৫ হাজার টাকা সুদের ওপর ধার নিয়েছিলেন। সময়মত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে টাকা দিতে না পারায় সুরুজ্জামাল ও তার সহযোগী মো. ফোজু, মো. তাহেরুল ও ছয়ফুল মঙ্গলবার খালেকের ব্যাটারি চালিত ভ্যানটি আটক করে। এ সময় তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে সুরুজ্জামাল ভ্যানটি আটক করে ৩৫ হাজার টাকায় তাহেরুলের কাছে বিক্রি করে দেয়। ভ্যান বিক্রি করা ওই টাকা সুদখোর মহাজনরা ভাগাভাগি করে নিয়ে আব্দুল খালেকের হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বিষ কিনে খাওয়ার পরামর্শ দেয়। এ সময় সুদখোররা আব্দুল খালেককে অপমান অপদস্ত করে এবং লাঞ্ছিত করে। খালেক বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি স্ত্রী মহিদা বেগমসহ পরিবারের লোকজনদের জানায় এবং ওই রাতেই সে বিষপান করে।

পরিবারের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় রাতেই খালেককে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আব্দুল খালেক মারা যায়।

আব্দুল খালেকের মা খতেজা বেগম বলেন, সুদখোর মহাজনদের চাপে অপমান ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় আব্দুল খালেক বিষপান করায় ক্ষুুব্ধ এলাকাবাসি বৃহস্পতিবার বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

মানববন্ধনে আব্দুল খালেকের বাবা হাফিজউদ্দিন, মা খতেজা বেগম, স্ত্রী মহিদা খাতুন, ভাই বুধারু মোহাম্মদ, বোন ফরিদা, জাফর আলী, ভান চালক রফিকুল ইসলাম, মোজাহার আলী মাস্টার, সাবেক মেম্বার সপিজুল ইসলাম, কলেজ ছাত্র রুবেলসহ এলাকাবাসি বক্তব্য দেন।

এ সময় বক্তারা সুদখোর মহাজন সুরুজ্জামাল ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে সুদখোর মহাজনদের বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন বলে এলাকাবাসি জানায়।

আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম জানান, ৩২৩ ও ৩০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত ভান চালক আব্দুল খালেকের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।