
ভোর রাতে ঠাণ্ডা হাওয়ার কাঁপন, সবুজ ঘাসে সাদা শেফালির শিশির ছোঁয়া সুগন্ধ, দরে বয়ে চলা ঝিরিঝিরি পানির লেক মনে করিয়ে দেয় এখন বড় সুন্দর একটি ঋতু সাড়া দিচ্ছে আমাদের মনে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা শরত হেমন্ত বসন্ত ছ’টি ঋতুর বারোটি মাস এক এক রঙে রাঙিয়ে তোলে নিজেকে। বাংলার মাটিতেও অবস্থান বড় মনোরম। গ্রীষ্ম বিদায় নিয়েছে, গরমের উত্তাপে অস্থির হওয়ার দিন নেই, বাজারে টাটকা সবজির আকাল নেই, বরং উল্টো চিত্রটিই দেখি কখনো সখনো হাটে গেলে। সাদা মূলো, সবুজ শিম, বেগুনী রঙের গোল গোল বেগুন, কচি সবুজ লাউ, হলদে রঙের মিষ্টি কুমড়ো, সবুজ কাকরোল ও চিচিংগা পটল ঢেঁড়শ চালকুমড়া সবই ছেয়ে আছে চারদিক। পাশে সহঅবস্থান করছে নানা স্বাদের শাক, লাউ শাক, কলমি শাক, মূলা শাক, পাট শাক, পুঁই শাক, ডাটা শাক, পালং শাক এবং গরবিনী লাল রঙের লাল শাক। এর সবই স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ভালো, তাই আজকাল গোশতের বদলে শাক-সবজির দিকে ঝোঁক তাবত্ বাঙালির।
আমি খুশি এগুলো সহজে রান্না করা যায়, দামেও সস্তা এবং শরীরের জন্যেও উপকারী। গোলমাল বাধে ছোট শিশুদের উপস্থিতিতে। তারা টেলিভিশনের পর্দায় নানা ধরনের ফাস্টফুডের বিজ্ঞাপনে এতোটাই আসক্ত যে আমাদের দৈনন্দিন মেনু তাদের জন্য মহাবিরক্তির কারণ। শেষ পর্যন্ত আপোষ করতে হয়, ঠিক আছে এক বেলা তোমাদের পছন্দ, অপর বেলা আমাদের রান্নাঘরের খাবারে তোমাদের সন্তুষ্ট হতে হবে।
কৃষি ক্ষেত্রে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, পোশাক শিল্প আমাদের মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে দেখে বড় ভালো লাগে। শিক্ষার মান ততটা বাড়েনি, বেড়ে গেছে বেকার ছেলেদের সমস্যা, তাই কলেজের পিয়নের একটি ছোট্ট চাকরির জন্য দরখাস্ত জমা পড়ে স্বল্প শিক্ষিত ছেলেদের সঙ্গে মাষ্টার্স করা মেধাবী ছাত্রেরও।
আমি জানি শ্রমের কোনো বিকল্প নেই, এবং শ্রমের মর্যাদা সর্বাগ্রে। তাই যিনি লোকের দ্বারে হাত পাতেন না, যে কোনো ধরনের ছোটখাটো চাকরিতে সন্তুষ্ট তাকেই আমি মানুষ হিসেবে উত্তম মনে করি। যখন কোনো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যাই, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিস পাওয়া যায়, বিভিন্ন সারিতে দেখতে পাই হাস্যোজ্জ্বল তরুণ ছেলে-মেয়েদের। তারা সেলস গার্ল বা সেলস বয় নন, তারা হলেন শ্রমজীবী একজন বিশ্বস্ত মানুষ। অনেক ক্রেতার ভিড়েও তারা বিরক্ত হন না, বরঞ্চ হাসিমুখে এগিয়ে আসেন যে কোনো ধরনের সেবায়। আমার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুত্র ও জননীর মতো, তাই তারা যদি ম্যাডাম না বলে খালাম্মা বলে সম্বোধন করেন, আমি খুশি হই। বস্তুত এদের মধুর ব্যবহারের কারণে আমার প্রায় রোজই একবার যেতে ইচ্ছে করে। যখন কেউ বলেন আপনি আজকে মোচা অথবা মিষ্টি কুমড়ো নেন, এটার সেল দিয়েছে, খুব ভালো লাগে। ওদের তো কোনো গরজ থাকার কথা নেই, এ হচ্ছে শুধু আন্তরিকতা ও ভালোবাসার ছোঁয়া।
খবরে পড়লাম চীনে একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজের জন্য দশ হাজার দরখাস্ত পড়েছে, বুঝতে পারলাম উন্নত দেশের মানুষেরা কর্মটাকেই জীবন বলে মেনে নিয়েছেন। তাই বলি, আমার দেশের অগণিত বেকার তরুণদের, তোমাদের সত্ উপার্জনই তোমাদের মানুষ হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানের সিঁড়িতে এগিয়ে দেবে। তোমরাই হলে আমাদের আশা, গৌরব ও বেঁচে থাকার আনন্দ।