Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৬ :

আজ ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলংকময়, রক্তঝরা ও বেদনাবিধুর আরেকটি দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিভৃত প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং আবু হেনা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে।

কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
যথাযথ মর্যদায় দিনটি পালন করবে জাতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন এ লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় চার নেতাকে তাদের সরকারে যোগদানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এই জাতীয় চার নেতা সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
এ কারণে তাদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়। এই চার বঙ্গ সন্তানই বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তারা যেমন ছিলেন নির্ভীক এবং সৎ, ঠিক তেমনই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। এই কলংকিত হত্যাকাণ্ডই প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
জেল হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর এ বিচার প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
মামলায় ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান মামলায় রায় দেন। রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে দেয়া রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাসেম মৃধাকে খালাস দেয়া হয়।
এছাড়াও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ সরকার পক্ষের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদেশে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তবে হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ এবং এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল আপিলের রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় বহিষ্কৃত দুই সেনা সদস্য দফাদার আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।