ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ৭ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ প্রতিহত করার হুমকি পরও কর্মসূচি আয়োজনে বিএনপি প্রথমে অনড় মনোভাব দেখালেও সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
একই জায়গায় পরদিন সমাবেশে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আগামী ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
“আমরা আশা করছি, এই জনসভা সফল করার জন্য প্রশাসন যতো শিগগিরই সম্ভব অনুমতি দেবেন। আমরা বিশ্বাস করি, ৮ নভেম্বর অনুমতি দেবে, না দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।”
এর আগে ৭ নভেম্বর বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি সমাবেশ করার ঘোষণা দিলে তা করতে দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ হুমকি দেন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী ও জনতার বিপ্লবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কেন্দ্র বিন্দুতে আসেন। এ দিবসটিকে বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আওয়ামী লীগসহ জাসদ দিবসটি মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে।
৭ নভেম্বরের আগে ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর চার ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করা হয়।
জাতীয় চার নেতাকে হত্যায় জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে তার গড়া দল বিএনপির ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি প্রতিহতের হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
ওই হুমকির জবাবে এর আগে রিজভী বলেছিলেন, “৭ নভেম্বর হচ্ছে এদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিপ্লব। এইদিন আমাদের কর্মসূচি হবে। আপনারা প্রতিহত করবেন, পুলিশ-র্যাব-বিজিবিকে লেলিয়ে দেবেন।
“আমরা বলতে চাই, এদিন আমরা শান্তি প্রতীক জলপাইয়ে পাতা নিয়ে মুক্তকণ্ঠে গান গাইতে গাইতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে উপস্থিত হব। দেখি কত গুলি আছে, আপনারা জনগণের শক্তিকে কীভাবে প্রতিহত করেন?”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ৮ নভেম্বরের কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রস্তুতির কথা জানান রিজভী।
৭ নভেম্বরের কর্মসূচি সামনে রেখে দেশজুড়ে নেতাকর্মীদের ‘হয়রানি করা হচ্ছে’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে ও ভয়ভীতি প্রর্দশন করছে।
“আমরা মনে করি, এটি বর্তমান শাসকগোষ্ঠির শুধু অগণতান্ত্রিক আচরণই নয় বরং এটি অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে দেশব্যাপী আধিপত্য বজায় রাখার আরও একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত।”
অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস জাহান শিরিন, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সরকার অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ‘প্রান্তিক অবস্থা’য় নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ের নামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রান্তিক অবস্থায় পরিণত করার সরকারের গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্য্কর হবে। এই আইনে ছোট-বড় সব ধরণের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বিক্রির ওপরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে রাজি নন। সেজন্য তারা বুধবার এক ঘণ্টা দোকান-পাট বন্ধ রেখে রাস্তায় মানববন্ধন করেছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিরোধিতা করে বলেছে, এতে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।