খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৬:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সড়ক দুঘর্টনায় দু’ পা ছিড়ে যাওয়া সেই শিশু মায়েদা ডান পায়ের অপারেশন শেষে মায়ের কোলে ফিরে এসেছে। সজেমিনে দেখা যায়, উপজেলার নবীপুর গ্রামের কৃষক এবাদুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে খাটে বসে তাঁর বোনের সাথে হাস্যজ্জল চেহারায় কথা বলতে দেখা গেছে। প্রায় বছর খানেক ধরে পঙ্গু অবস্থায় থাকার পর শিশুটির চিকিৎসায় স্থানীয় সাংসদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি’র সহযোগিতা পেয়েছেন পরিবার।
জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ঢাকা কাপাসিয়ায় মনোহরদী সড়কের নবীপুর গ্রামের করিমের মিল নামক স্থানে এবাদুল্লাহর ৩ বছরের মেয়ে শিশু মায়েদা রাস্তার পাশে খেলায় মগ্ন ছিলো। স¤্রাট পরিবহনের একটি মিনিবাস শিশুটির দু পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। এতে শিশুর দু পা ছিড়ে যায়।
ঘটনার পর শিশুর মা কামরুন্নাহার সাথে সাথেই মেয়েকে হাতকোলে করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ শিশুর বেগতিক অবস্থা দেখে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করে। হাসপাতাল চত্তরে অ্যম্বুল্যান্স দাড়ানো থাকলেও হাসপাতালের দালাল চক্র অ্যম্বুল্যান্স দেয়নি। সেখানে উপস্থিত ছিলো সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক। দালাল চক্রের সাথে বাকবিতন্ডা করে শিশুটিকে অ্যম্বুল্যান্স এ পাটাতে পারেনি ওই সাংবাদিক।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক জানায়, শিশু মায়েদাকে অবশেষে ভাড়া প্রাইভেটকারেই পাঠাতে বাধ্য হন। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা নড়ে সারাদিনেও পৌছতে পারেনি ঢাকা। রাত ৯ টার দিকে ভর্তি হয় পঙ্গু হাসপাতালে। এতে শিশুর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। শিশুটিকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে পরিবারের। কিছুদিন চিকিৎসা করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। টাকার অভাবে চিকিৎসা খরচ অসম্ভব হয়ে পড়ে। স¤্রাট পরিবহন কতৃপক্ষ নামমাত্র ২৫ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু চিকিৎসায় দরকার আরও অনেক টাকা। শিশুর চিকিৎসা খরচ জোগাতে তাঁর বাবা ৩ কাঠা জমি বিক্রি করে। তাতেও চিকিৎসা খরচ মেটানো সম্ভব হয়নি।
শিশুর বাবা এবাদুল্লাহ জানান, অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা খরচ জোগাতে উপায়ান্ত না পেয়ে ওই সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক এবং সাংবাদিক নুরুল আমীণ সিকদারের মাধ্যমে রিমি এমপি’র সাথে যোগাযোগ করি। এমপি রিমি আমার মেয়েকে আবারও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে বিষেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ গনি মোল্লার সাথে যোগাযোগ করতে বলে। আমি তাই করি।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে গত ৯ মাসের মধ্যে পর পর ৩ টি অপারেশন করেয়েছি। কিছুদিন আগের অপারেশনটি শেষ বারের অপারেশন। ডাক্তার বলেছে এবার ভালো হবে।
পঙ্গু হাসপাতাল তথ্য সূত্রে জানা যায়, শিশু মায়েদার ডান পায়ে ফিকজিয়েশন করা হয়েছে। জয়েন্ট গুলো ঠিক করার জন্য এটা দরকার ছিলো।
শিশুর মা কামরুন্নাহার মেয়ের সুস্থতা দেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এমপি’র উছিলায় আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে। অপারেশনের পর ৩ দিন মেয়েটা কিছু খায়নি। আমরা ভেবেছি সে আর বাঁচবেনা। কিন্তু ৩ দিন পর সে হাসলো। খাবার খেল। আমাকে মা ডাকতে শুরু করে। বাবা কোথায় জানতে চাইল। এখন ভালো আছে।
এবাদুল্লাহ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু মায়েদা এখন সুস্থ প্রায় । তাঁর বুঝতে বাকি নেই, কিছু দিন পর তাকে আর ঘরে শুয়ে থাকতে হবেনা। বাড়িতে কেউ আসলেই জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। খেলনা হাতে দিলে শিশুটি হাসে। শিশুটি বলে, আমাকে মজা কিনে দাও। আমি মজা খাব। সে আরও বলে তুমি আমাদের সাথে থাক। প্রায় এক বছর দ’ু পায়ের পঙ্গুত্ব পরিবারকে হতাশ করেছিল।
জানা যায়, দুঘর্টনার কিছুক্ষণ পর শিশুটিকে কাপাসিয়া হাসপাতলে নেওয়ার পর কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার মৌসুমি দাস বলেছিলেন, শিশুটির অবস্থা সিরিয়াস। ডান হাটুর নীচের স্কিন, মাশেল ও আটাল পুরোটাই নেই। বাম পায়েও জখম আছে। ফিমার করতে হতে পারে। তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক সহ স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হলে কাপাসিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়।