খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০১৬:
মিয়ানমারে চরম নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা। রাখাইন প্রদেশে গত রবিবার অন্তত ৯ জন রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। শুধু মংড়ুর একটি গ্রামে এখন পর্যন্ত ৯০ জন নারী-পুরুষ-শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান সমর্থিত ‘রোহিঙ্গা ভিশন’ নামে একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক ভিডিওচিত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আগুনে পোড়া কয়েকটি মরদেহ এবং এগুলোকে ঘিরে তাদের স্বজনরা আর্তনাদ করছে এমন খবর জানিয়েছে বিবিসি।
এদিকে রাখাইন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালাতে মুসলিম বিরোধী একটি মিলিশিয়া গ্রুপকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করছে এমন খবর প্রচারের পর প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। শুক্রবার নাফ নদী পার হয়ে অবৈধভাবে কক্সবাজারের টেকনাফে প্রবেশের চেষ্টাকালে ১২৫ রোহিঙ্গাকে আটকের পর মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যরা।
আর জাতিসংঘ বর্তমান মানবিক পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে, রাখাইন রাজ্যে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিতে বলেছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইনে এক আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন হাজার হাজার মানুষ। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কোনো অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ভিশন নামের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি ভিডিওচিত্রে আগুনে পোড়া মৃতদেহ ঘিরে স্বজনদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। ভিডিওটিকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে এতে যাদেরকে দেখানো হয়েছে তাদের ভাষা অনেকটা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এলাকার আঞ্চলিক ভাষার মতোই। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন সময়ে এ রকম ভাষাতে কথা বলতে দেখা গেছে। ভিডিওতে রাখাইন প্রদেশের মংড়ুর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তিনটি মৃতদেহ দেখানো হয়। আকার দেখে বোঝা যায়, এগুলো মানুষের মৃতদেহ, তবে পরিচয় উদ্ধারের কোনো উপায় নেই। ভিডিওতে একটি মৃতদেহের পাশে বসে দুই মহিলাকে কাঁদতে দেখা যায়। এক মহিলা মৃতদেহটির মুখে হাত বোলাচ্ছিলেন এবং বিলাপ করছিলেন। পাশেই ছিল আরো একটি মৃতদেহ।
ভিডিওচিত্রটিতে একজন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন, সম্ভবত ভিডিওটিও তিনিই ধারণ করছিলেন। তাকে দেখা যায়নি। তিনি বলছিলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ১৩ নভেম্বর এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ৯ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। একই সঙ্গে এখনো ওই গ্রামের ৯০ জন নিখোঁজ।
অন্যদিকে, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মিয়ানমারকে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আদ্রিয়ান এডওয়ার্ডস শুক্রবার জেনেভায় বলেছেন, রাখাইনে জরুরি ভিত্তিতে খাবার, আশ্রয়, ওষুধ ও চিকিৎসা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ৪৩০টি বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। অনেকে জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, রাখাইন মিয়ানমারের দারিদ্র্যপীড়িত প্রদেশ এবং সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিপীড়নের জন্য পরিচিত। এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০০ জন নিহত হয়।