Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭:  57শফিকুল ইসলাম শাহীন, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র”য়ারীতে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে সমগ্র দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে আন্দোলন বেগবান হয়। একজন বাংলা ভাষী মানুষ হিসেবে এ আন্দোলনে শরিক হওয়া উচিত এ ভাবনায় তৎকালিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলহাজ একামত আলী তালুকদারকে দিবা রাত্রি তাড়িত করতে থাকে। তিনি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে উঠেন। একামত আলী তালুকদার ২০ ফেব্র”য়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত ভাষা আন্দোলন বিষয়ক সভায় যোগদেন। সভাটি ছিল ২১ফেব্র”য়ারী সকল ছাত্র মিলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার পরার্মশ সভা। সভায় উপস্থিত ২/১জন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে মত দিলেও বাকী সবাই ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে। কিন্তু ২-১জনের দ্বিমতের কারণে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পরের দিন আবার আমতলায় গাজিউল হক গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার ঘোষণা দেন। ঘোষণা মোতাবেক সকল ছাত্র একত্রি হলে আলহাজ একামত আলী তালুকদার সর্বপ্রথম পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামের এক জোতদ্দার কৃষক পরিবারের জন্ম একামত আলী তালুকদারের। তার বাবার নাম আহম্মদ আলী তালুকদার। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তার প্রথম পড়া লেখার হাতে খড়ি। এরপর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর মাইনর স্কুল, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল মহারাণী হেমন্ত কুমারী হাই ইংলিশ স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিক পাস করেন। আই এ পাশ করেন ১৯৫১ জামালপুর এ.এম কলেজ থেকে। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ পাস করেন। পড়ালেখা শেষে নারায়নগঞ্জ বার একাডেমী স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুর”। সেখানে চার বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি ভিলেইজ এইজড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের পিআরও হিসেবে ৩ বছর কর্মরত ছিলেন। এই ভাষা সৈনিকের জীবনের বেশী সময় কাটিয়েছেন শিক্ষকতা করে। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পযর্ন্ত ৩৪ বৎসর শিক্ষকতা করেছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।
আলহাজ একামত আলী তালূকদার এখন বয়সের ভারে ন্যুজ। গত ২৬ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকালে তার সংগে কথা হয় তাঁর নিজ বাড়ীতে। স্মৃতির পাতা থেকে বায়ান্নের উত্তাল সেই সব দিনগুলোর কথা বলতে শুর” করেন। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের ছাত্ররা সক্রিয় ছিল। আন্দোলনের সুতিকাগার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা। ১৯৫২ সালের ফেব্র”য়ারী মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন তুঙ্গে। ২১ফেব্র”য়ারী আমরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করলাম। সর্ব প্রথম আমি উন্মাদের মত দৌড় দিলাম ১৪৪ ধারা ভাঙ্গতে । পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলাম। আমার পিছে পিছে যারা এসেছিল সবাই গ্রেফতার হলো। আমাদের একটি গাড়ীতে করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। ঢাকার অন্য এলাকা থেকেও ছাত্রদের গ্রেফতার করে আমাদের সাথে রাখা হলো। সন্ধ্যা পযর্ন্ত ১২১ জনকে বন্ধী করা হলো তেজগাঁও থানায়। ২২ ফেব্র”য়ারী সকালে আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ২ দিন আমরা গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম সহপাঠীদের খবর জানার জন্য। কারণ আমাদের মনে আশংকা ছিল কেউ মরলো কিনা? অবশেষে কারাগারে গায়েবানা জানাজা পড়া হলো। শুনলাম ছাত্রদের উপর গুলি হয়েছে। অনেক ছাত্র নিহত ও আহত হয়েছেন। ২১ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলাম। জেল থেকে বের হওয়ার পর শুনলাম যে সব পরিবারে ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেলে পড়তে ছিলেন তাদের পরিবার ও আত্বীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করছে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে কি হয়েছে তখনও আমার পুরো পুরি ধারণা নেই। এ অবস্থায় বাড়ী চলে এলাম। বাড়ী এসে শুনি ভাষা আন্দোলনে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশ ঐক্যবদ্ধ। শুনলাম আমাদের শিয়ালকোল হাট থেকেও এলাকার সচেতন মানুষ চাঁদা তুলেছে বন্দী ভাষা সৈনিকদের মুক্ত করার জন্য এবং কারাগারে তাদের জন্য খাদ্য পাঠাতে। জানতে পারলাম আমাদের এলাকাতেও ¯ে¬াগান হয়েছে, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’
আলহাজ একামত আলী তালূকদার বলেন, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের জননী। ভাষা আন্দোলন না হলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। বাংলাদেশ নামে কোন রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। অথচ যে ২/১ জন ভাষা সৈনিক জীবত আছেন তাদের প্রাপ্য সম্মান থেকে তাঁরা বঞ্চিত। আমি প্রধান মন্ত্রীর নিকট দাবী রাখবো জীবত ভাষা সৈনিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করার জন্য । বিভিন্ন অঞ্চলের প্রয়াত ও জীবিত ভাষা সৈনিকদের নামে রাস্তা ঘাটের নাম করা হোক।