খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৭: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় একই আসনের সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানকে প্রধান আসামী করে আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।
রোববার বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে হত্যাকা-ের দীর্ঘ চারমাস পর গাইবান্ধা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সুন্দরগঞ্জ) আমলী আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান।
চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামীরা হলেন, লিটন হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া চার কিলার আবদুল হান্নান, মেহেদী হাসান, শাহীন মিয়া, আনারুল ইসলাম ওরফে রানা, প্রধান সহযোগী চন্দন কুমার, শামসুজ্জোহা ও সুবল কসাই। এদের মধ্যে চন্দন কুমার সরকার ভারতে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।অন্য আসামীরা বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। মেহেদী হাসান, শাহিন মিয়া ও রানার বাড়ি সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর সমস কবিরাজটারি গ্রামে।সুবল কসাই ও চন্দন কুমারের বাড়ী একই উপজেলার বামনাডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামে এবং সামসুজ্জোহার বাড়ী পাশ্ববর্তী সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামে।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের শেষ দিকে এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আব্দুল কাদের খাঁন। লিটনকে সরিয়ে রাজনীতির পথ সুগম করতেই এমন চক্রান্ত করেন কাদের। বিভিন্ন দফায় ভাড়াটে খুনিদের ১০ লাখ টাকা দেন কাদের খাঁন। হত্যাকান্ডে তিনটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র অবৈধ।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সুন্দরগঞ্জ) আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর (জিআরও) মিজানুর রহমান মিজান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটজনকে অভিযুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা আাদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন। চার্জশিটের বিষয়ে আদালতের বিচারক পরবর্তীতে শুনানি করবেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান জানান, সাংসদ লিটন হত্যার পর অধিকতর তদন্ত শেষে আটজনের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায়। এর আগে আসামীরা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে একজন পলাতক থাকায় তাকে ইন্টারপোলের সহায়তার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাষ্টারপাড়ায় নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন মনজুরুল ইসলাম লিটন। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে সাতটার দিকে মারা যান। পরদিন লিটনের বড়বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি আবদুল কাদের খানকে বগুড়া শহরের রহমান নগরের গরীব শাহ ক্লিনিকের বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন তাকে ১০দিনের রিমা-ে নেয়া হয়।রিমা-ে থাকা অবস্থায় ২৫ ফেব্রুয়ারি সাংসদ লিটনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আবদুল কাদের খান।
এদিকে লিটন কত্যাকান্ডের পর থেকে (কাদের খান গ্রেফতার হওয়ার আগে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতাসহ জামায়াত-বিএনপির অন্তত ২৫০জনকে আটক করে পুলিশ।এদের মধ্য ২০জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।বাকিদের নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা এখনো জেলা কারাগারে আছেন।