Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭: নাবিকদের জন্য ক্রমেই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম বন্দর। ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়ন না হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত বন্দরের বহির্নোঙরে অপরিসর জায়গায় এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে পণ্য স্থানান্তর বা শিপ-টু-শিপ (এসটিএস) কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় সেখানে জাহাজের জট তৈরি হচ্ছে। খাঁড়ির মুখে বহির্নোঙরের অবস্থান, সেখানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর উন্মুক্ত প্রবাহ এবং একই সময়ে নদীতে স্রোতের প্রচণ্ড তোড় ও হোল্ডিং গ্রাউন্ডের অপর্যাপ্ততা নৌযান দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাহাজ চলাচল খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইন্টারপোর্ট মেরিটাইম লিমিটেড।

ইন্টারপোর্ট মেরিটাইমের সর্বশেষ লস প্রিভেনশন বুলেটিনে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিভিন্ন ঝুঁকির কথা তুলে ধরা হয়েছে। বন্দরের বহির্নোঙরে শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার কার্যক্রমে গমনেচ্ছু নাবিকদের জন্য পরামর্শ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে যাতায়াতকারী জাহাজের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের যেকোনো সময়ে গড়ে ৬০-৯০টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করছিল। বাল্ক (খোলা) কার্গো পরিবহনকারী বেশির ভাগ জাহাজ বহির্নোঙরে এসটিএস ট্রান্সফার পদ্ধতিতে লাইটার জাহাজ ও বার্জে পণ্য খালাস করায় সেখানে জাহাজের জট সৃষ্টি হয়।

ইন্টারপোর্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বহির্নোঙরের এ, বি ও সি জেটিগুলো কর্ণফুলী নদীর প্রবেশমুখের বিপরীতে অবস্থিত। এমনিতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজগুলো বহির্নোঙরে নিরাপদে নোঙর করতে পারে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সাড়ে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজও বহির্নোঙরে পৌঁছে। তবে বেশি ড্রাফটের জাহাজগুলোর সিংহভাগের মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবং তাদের নিজেদের লাইটার জাহাজ রয়েছে। এ সুবাদে ভারী ড্রাফটের জাহাজগুলো বহির্নোঙ্গরে পৌঁছার পরপর সেগুলোর পণ্য সরিয়ে ড্রাফট কমানো হয় এবং এভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও হ্রাস করা হয়।

ইন্টারপোর্ট মেরিটাইম বহির্নোঙ্গরে জাহাজ দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে। সংকীর্ণ জায়গায় নোঙ্গর ফেলতে অথবা নোঙ্গর অবস্থান পরিবর্তন করতে গিয়ে অন্য জাহাজের সম্মুখভাগ অতিক্রমের চেষ্টা থেকে দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ড্রাফট নিয়ে বহির্নোঙ্গরে পৌঁছানো এবং অপর্যাপ্ত আন্ডার-কিল ক্লিয়ারেন্স (ইউকেসি— জাহাজের নিম্নতম পয়েন্ট ও নদীর তলদেশের ব্যবধান) অনেক সময় নোঙ্গর ড্র্যাগিংয়ের (নোঙ্গর করা সত্ত্বেও জাহাজের ভেসে চলা) কারণ হয় বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে দুর্ঘটনার জন্য একসঙ্গে অনেক লাইটার জাহাজকে পাশে অবস্থান করতে দেয়ায় টানাহেঁচড়া বৃদ্ধি, নোঙ্গর ড্র্যাগিং, পর্যাপ্ত ফেন্ডারবিহীন জাহাজকে পাশে নোঙ্গর করতে দেয়া এবং সম্ভাব্য নোঙ্গর ড্র্যাগিংয়ের সময় জরুরি ভিত্তিতে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য জাহাজের ইঞ্জিন প্রস্তুত রাখার ব্যর্থতাকেও দায়ী করেছে তারা।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বহির্নোঙ্গরে অবস্থানকারী জাহাজের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৫০টি জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করে। বিগত বছরে অপেক্ষমাণ জাহাজের গড় সংখ্যা ছিল ৭৮। ২০১৫ সালে গড়ে ৫০টি ও ২০১৪ সালে ৪০টি জাহাজ বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করত। জাহাজের জট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সংশ্লিষ্টরা বহির্নোঙ্গরের সীমানা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদে আমরা সম্প্রতি বহির্নোঙরের সীমানা বাড়ানোর জন্য বন্দরকে সুপারিশ করেছি। জাহাজের নিরাপত্তা ও একসঙ্গে অধিক জাহাজ অবস্থানের সুবিধার্থে বন্দর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময়ে জাহাজ মালিকদের সংস্থাগুলো তাদের নাবিকদের জন্য নির্দেশনা ও সতর্কবার্তা দেয়। এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরের অবস্থান অনুযায়ী তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত প্রিন্সিপাল বা চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের কোনো কর্তৃপক্ষই এ-সংক্রান্ত কোনো সতর্কতা বার্তা দেয়নি।

তবে সমুদ্রগামী জাহাজের বীমাকারক দ্য আমেরিকান ক্লাবের দেশীয় প্রতিনিধি ইন্টারপোর্ট মেরিটাইম দুর্ঘটনার ঝুঁকি সম্পর্কে নাবিকদের জোরালোভাবেই সতর্ক করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া সাধারণ নির্দেশনায় কুতুবদিয়া থেকে বহির্নোঙ্গরে জাহাজ সরাতে প্রয়োজনীয় ড্রাফট উল্লেখ করা হয় না। এ কারণে নাবিকদের ইলেকট্রনিক চার্ট ডিসপ্লে অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমে (ইসিডিআইএস) পুরোপুরি নির্ভর না করে নির্দিষ্ট তারিখের পেপার চার্ট দেখতে বলেছে ইন্টারপোর্ট মেরিটাইম।

সুত্র : বণিক বার্তা