Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮: সিলেটে রাজনীতির আড়ালে সক্রিয় ‘চিহ্নিত’ অপরাধীরা। তারা প্রকাশ্য রাজপথে দিচ্ছে অস্ত্রের মহড়া। কিন্তু এক্ষেত্রে নীরব পুলিশ। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তবে পুলিশ বলছে
, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি বছরে সিলেটের রাজপথে রাজনীতির আড়ালে দুটি মর্মান্তিক খুনের ঘটনা ঘটে।

১লা জানুয়ারি সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে প্রকাশ্য ছুরিকাঘাতে খুন হয় মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত শিমু। এ ঘটনায় সিলেটে শুধু ছাত্রদলে নয়, বিএনপির নেতাদের মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর সিলেটের রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বিএনপি ও ছাত্রদল। পুলিশি দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে সিলেট বিএনপির তরফ থেকে কয়েকটি শোডাউন দেয়া হয়েছে। একের পর এক শোডাউনে মাঠের রাজনীতিতে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল দলটি। কিন্তু ওই সময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শিমু খুনের ঘটনা অবাক করে দিয়েছে সবাইকে। ছাত্রদল নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে ছাত্রদলের রাজনীতির আড়ালে কিছু অপরাধী ফের মাঠে সক্রিয়। আর এর প্রমাণ মিলেছে শিমুর খুনের মধ্যে দিয়ে। শিমু খুনের ঘটনার জন্য ছাত্রদলের শাহী ঈদগাহ লিটন গ্রুপের কর্মীরা সরাসরি দায়ী করেছে কাজী মেরাজ গ্রুপকে। কাজী মেরাজসহ কয়েকজনকে আসামি করে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তারা জানান, ছাত্রদল নেতা কাজী মেরাজ গ্রুপে কয়েকজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী রয়েছে। এর মধ্যে নাবিল রাজা একজন। শিমু খুনের সঙ্গে নাবিল রাজা সরাসরি সম্পৃক্ত বলে দাবি করেন তারা। নাবিল রাজাকে ওই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। ওই সময় কাজী মেরাজও ঘটনাস্থলে ছিল। নাবিল রাজাকে এক নামেই চিনেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা। ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও নাবিল অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। সে সবসময় কোমরে ধারালো অস্ত্র রাখতো। নগরীর দর্শন দেউড়ি গ্রুপ ছাত্রদলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার। কয়েক মাস আগেও নাবিল রাজা কারাগারে ছিল। এর আগেও নাবিল রাজা ছাত্রলীগের তুষার গ্রুপের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছিল।

ওই এলাকার ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের সঙ্গে তার সম্পর্ক। ফলে ছাত্রলীগের কয়েকজন দুর্ধর্ষ অপরাধীর সঙ্গে এক হয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অংশ নেয়। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাও স্বীকার করেছেন- নাবিল রাজা বেপরোয়া। সে নামে ছাত্রদল নেতা হলেও পেশাদার অপরাধী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তার গ্রুপের নিয়ন্ত্রক কাজী মেরাজ সব সময় তাকে শেল্টার দিয়ে থাকেন বলে সে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এদিকে ছাত্রদল নেতা শিমু খুনের ঘটনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ নাবিল রাজা ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে নাবিল রাজা ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় শিমুর এলাকা শাহী ঈদগাহবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে মানববন্ধন করে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। সরকারি দল হিসেবে এখন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অপরাধীর সংখ্যা বেশি। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের কারণে কয়েকটি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের কর্মকাণ্ড রীতিমতো আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নগরীর টিলাগড় এলাকা। টিলাগড়ে রয়েছে ছাত্রলীগের আজাদ-রঞ্জিত গ্রুপ।

এ দুটি গ্রুপের আড়ালে টিলাগড়ে কয়েকজন ভয়ঙ্কর অপরাধী বাস করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গত ৪ঠা জানুয়ারি টিলাগড়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলির লড়াই হয়। এ সময় বিপুলসংখ্যক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় মাথায় হেলমেট পরে প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দেয় এক যুবক। ওই যুবক আজাদ গ্রুপের কর্মী বলে জানা গেলেও পুলিশ ওই অস্ত্রধারীকে ছাত্রদল কর্মী চিহ্নিত করেছে। ওইদিন সংঘর্ষকালে প্রকাশ্য রামদা, দা নিয়ে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এর আগেও একাধিকবার নগরীর টিলাগড়ে প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। আরএমসি ও সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ব্যবহার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র। ছাত্রলীগের ওই অস্ত্রধারী সম্পর্কে প্রথমে নীরব ভূমিকা পালন করে পুলিশ। কিন্তু অস্ত্রসহ ছবি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। সিলেটের শাহপরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, ওই দিন টিলাগড়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিল ছাত্রদলের উপশহর গ্রুপের কর্মীরা। ইতিমধ্যে পুলিশ সেটি জানতে পেরেছে। এ কারণে অস্ত্রধারী ওই ছাত্রদল কর্মীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত অ্যাকশনে না যাওয়ায় ৬ই জানুয়ারি রাতে টিলাগড়ে খুন করা হয় ছাত্রলীগের রঞ্জিত গ্রুপের কর্মী তানিম খানকে। ওইদিন রাতে তানিমকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় ওই যুবকরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকায় তারা প্রতিবাদের সাহস পাননি। তবে ওই খুনের ঘটনার পর পুলিশ ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের দুর্ধর্ষ অপরাধী ডায়মন্ডকে গ্রেপ্তার করেছে। শাহপরাণ থানার ওসি আক্তারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। খুনের ঘটনার সঙ্গে ডায়মন্ড সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল- এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। টিলাগড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- ডায়মন্ড ছাত্র নয়। সে ছিনতাইকারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার নেতৃত্বে কয়েকজনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ সব ধরনের অস্ত্র রয়েছে। আগে সে রঞ্জিত গ্রুপের কর্মী ছিল। এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পোড়ানো ঘটনার পর গ্রুপ বদল করে আজাদ গ্রুপে আসে ডায়মন্ড। এরপর থেকে আজাদ গ্রুপের কর্মীদের তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এবং ওই তিন খুনের ঘটনার পরপরই ডায়মন্ডের নাম আসে। ডায়মন্ডের সহযোগী হিসেবে অন্ধকারে পা দিয়েছে আজাদ গ্রুপের নিয়ন্ত্রক আজাদের ভাতিজা আজলাও। সেই আজলাকে ছাত্রলীগ নেতা তানিম খুনের ঘটনায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। তবে আজাদের দাবি- তিনি ৩২ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। এই সময়ে কাউকে একটি থাপ্পড় পর্যন্ত দেননি। এখন সব খুনের ঘটনার দায়ভার তার উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, মামলায় প্রকৃত অপরাধীরা আসামি না হওয়ায় বারবার এসব ঘটনা ঘটছে। টিলাগড়বাসীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এসবের মোকাবিলায় নামবেন বলে জানান।