খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি গত নির্বাচনে আসেনি, তাতে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়নি। আমরা ওইবার জানতাম তারা নির্বাচনে আসবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আসেনি। তাতে তো নির্বাচন থেমে যায়নি। তো এবারও তাদের আসার কথা আছে। তবে যদি এবারও না আসে তাহলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
ইতালি ও ভ্যাটিক্যান সিটি সফর শেষ করে দেশে ফেরার পর সোমবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে। আমি জানি না আপনাদের কাছে সেটা আছে কি না।’ উপস্থিত সাংবাদিক উদ্দেশে প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র কি আছে সবার কাছে?’
‘ওটার (বিএনপির গঠনতন্ত্র) কিন্তু আসলে খোঁজও পাওয়া যায় না। আপনারা যদি তাদের গঠনতন্ত্রটা পড়েন আর পজিশনের লোক গুণে দেখেন দেখবেন গঠনতন্ত্র মানা হয় না। ওটার ধারও কেউ ধারে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘একটা সুবিধা তাদের (বিএনপি) গঠনতন্ত্রে আছে যিনি চেয়ারপারসন, তার হাতে সব ক্ষমতা। যে ক্ষমতা আমারও নেই। অর্থাৎ আমাদের গঠনতন্ত্রে নেই। আমাদের গঠনতন্ত্রে ক্ষমতা প্রেসিডিয়াম ও কার্যকরী কমিটির হাতে। চূড়ান্ত ক্ষমতা নিবে আমাদের কাউন্সিল।’
‘কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ সংশোধন করে দিল। দুর্নীতি, ফৌজদারি কার্যবিধি বা মামলায় আসামি হলে দলে থাকতে পারবে না। সেটা তারা সংশোধন করে নেয়।’
সরকারপ্রধান আরো বলেন, বিএনপির দলে কি বাংলাদেশের কেউ ছিলো না প্রতিনিধিত্ব করার জন্য? তারেক রহমানের মতো দুর্নীতি সর্বজনবিদিত লোককে কেন দিতে হল? আমি যখন জেলে গিয়েছিলাম আমি তো আমার ছেলে বা বোনকে দায়িত্ব দেইনি। দিয়েছিলাম নিজের দলের লোককেই। তাহলে তাদের কি প্রতিনিধিত্ব দেয়ার লোকের অভাব পড়ে গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর রাজনীতি করবে না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে এই মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেল। এরপর মামলায় শাস্তি হলো। মামলাগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। আমেরিকার এফবিআইয়ের (কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা) তদন্তে ধরা পড়েছে তার দুর্নীতি। তারা স্বাক্ষী দিয়েছে। এরপর সাজাপ্রাপ্ত। তাকেই করা হলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন। বিএনপিতে এখন যে নেতারা আছে, যারা কর্মঠ সেখান থেকে কি একটা লোক খুঁজে পাওয়া গেল না যাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা যেত?’
, তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি)। তিনি বলেন, ‘আমার বোনকেও করিনি, ছেলেকেও করিনি। প্রবাসী কাউকে করিনি। দেশের ভেতর থেকেই করেছি।’
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গৃহপরিচারিকা ফাতেমার থাকা নতুন নয়। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে শাসনামলেও একই ঘটনা ঘটেছিলো।
‘অনেকে আছেন শুধু দিতেই পারে। আমরা দুই বোন, আমাদের একটা মাত্র বাড়ি। আমার আব্বা সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছেন, ওই বাড়িটি তাই জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট করে ১৭০০ থেকে ১৮০০ জনকে সহায়তা করি। আমরা এটা নিয়ে খুব একটা প্রচারও করি না।’
কেউ যদি এতিমের টাকা আসার পরও মায়া ত্যাগ করতে না পারে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি বলতে গেলেই তো..।
শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমাকে শ্যাওলা ধরা একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, খাট ছিল ভাঙা। তাকে (খালেদা জিয়া) রাখা হয়েছিল স্পিকারের বাড়িতে, তার সঙ্গে এই ফাতেমাকে দেয়া হয়েছিল। এটা গোপন ছিল। ডিআইজি হায়দার (সামছুল হায়দার সিদ্দিকী) সাহেবকে জিজ্ঞাস করলেই এটা জানতে পারবেন।
‘আদালত দিয়েছেন। বেশি কিছু তো দেয়ার নেই, একজন মেইড সার্ভেন্ট দিয়েছে। যদি আরও কিছু ডিমান্ড করে।’
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু না, এটা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। এটা কখনো প্রচার হয় কখনো প্রচার হয় না। এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশি ছড়াচ্ছে। আর এটাই বাস্তবতা। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি সমস্যারও সৃষ্টি করে।
‘যখন একটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র যায় তখন সঠিক সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করতে প্রশ্নপত্র অন্তত ১ ঘণ্টা আগেই খুলে রেডি রাখতে হয়। এটা তো সবাই জানে। তখন যদি কেউ সেটার ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়, তাহলে তখন কী করবেন_?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে হবে। ইন্টারনেট বন্ধ হলেই যে সব সমাধান হবে, তাতো না। তাহলে, মোবাইল ফোনসহ ডিজিটাল পদ্ধতি বন্ধ করে দিতে হবে। দেশে এখন সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ হয় প্রযুক্তির মাধ্যমে তাহলে সেটা বন্ধ করে দিলে দেশের কী অবস্থা হবে_?’
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে কি শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করবেন এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নফাঁস কি শিক্ষামন্ত্রী অথবা সচিব করেন? তাহলে তাদের পদত্যাগের কথা আসবে কেন? তবে অবশ্যই কিছু একটা আছে, না হলে এভাবে ছড়াবে কীভাবে? তাই বলছি, আপনারা তাদেরকে ধরে দিন, আমরা শাস্তি দিয়ে দেবো।’ সূত্র: চ্যানেল আই, সময় টিভি, এনটিভি