খােলা বাজার২৪। সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: সরকারি গুদামে গতকাল পর্যন্ত ১০ লাখ ৫০ হাজার ৮৮২ টন চালের মজুদ ছিল, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন বেশি। বাজারে সরবরাহেরও কোনো কমতি নেই। তবু রাজধানীর বাজারে বেড়েছে চালের দাম। সরু বা মোটা, সবই চালেরই দাম বেড়েছে কেজিতে তিন-চার টাকা।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার। ভেতরে যেতেই উত্তর সিটি করপোরেশনের দেওয়া নির্ধারিত মূল্য তালিকার বোর্ড। যেখানে মোটা, মাঝারি কিংবা সরু সব ধরনের চালের দামই নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কিন্তু কোনোটির সঙ্গেই মিল নেই বাস্তবতার। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম বাড়ার পেছনে অজুহাতেরও কোনো কমতি নেই।
সরকারি একাধিক সূত্র বলছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা। সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও আড়তদাররা বলছেন আমদানি করা চালের মূল্য বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে দেশি চালে। কিছুদিন আগেই বাজারে এসেছে নতুন আমন চাল। পাশাপাশি আমদানি করা চালের সরবরাহও রয়েছে যথেষ্ট। সব মিলিয়ে বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু তার কোনো প্রভাবই নেই চালের বাজারদরে। উল্টো গত কয়েক দিনে কেজিতে ১ থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বাজারের সব ধরনের চালের দাম। দোষটা বরাবরই বাড়তি পরিবহন খরচ আর মিলমালিকদের ঘাড়েই চাপাচ্ছেন চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাল ও গম মিলিয়ে ৭৮ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলোয় চাল ও গম আমদানির জন্য ২৪৪ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২১২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে অস্থির চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতদরিদ্রদের জন্য ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। চালুর পর মাত্র ২ প্রান্তিকে তালিকাভুক্ত ৫০ লাখ সুবিধাভোগীকে এ চাল দিতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। এরপর সরকারি ভাণ্ডারে চাল সংকট দেখা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দৃশ্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে জাতীয় নির্বাচনের এ বছরে আবার চালু হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। মার্চ থেকে পরবর্তী ৩ মাসের জন্য চলবে এ কর্মসূচি। সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমন ঘোষণা দেন।
চালের খুচরা মূল্য ফের অস্থির হলেও সরকারকে অন্ধকারে রেখে বন্ধ রাখা হয়েছে দরিদ্রবান্ধব জনপ্রিয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ওএমএস (খোলাবাজারে বিক্রি)। অথচ খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় নীতিমালা ২০১৫-এ স্পষ্ট বলা রয়েছে, ‘খাদ্যশস্যের বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ করে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেওয়া এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখতেই ওএমএস কর্মসূচি’।
খাদ্য বিভাগের রেকর্ড বলছে, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে (আমন সংগ্রহ মৌসুমে) ওএমএস কর্মসূচি চালু রাখা হয়। একই কারণে ২০১১-১২ অর্থবছরে (দুই ঈদ বাদে) সারা বছরই চালু রাখা হয় ওএমএস কার্যক্রম। বর্তমানে চালের দাম সর্বকালের রেকর্ড ছাড়ালেও বন্যাকবলিত হাওর অঞ্চলের ৩ জেলা বাদে সর্বত্রই এ কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির অস্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে জনবান্ধব সর্বজনীন এই কর্মসূচি বন্ধ থাকায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ কর্মসূচির সুফল ‘তালিকাভুক্ত’ কেউ নয়, আমজনতা পেয়ে আসছিল। অথচ সংগ্রহ মৌসুমের অজুহাতে এ কর্মসূচি বন্ধ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু কর্মচারী সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করতে এ অপচেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তথ্যসূত্র : আমাদের সময়