Tue. May 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪।।বৃহস্পতিবার ২৬ জুলাই, ২০১৮।। মোঃ রাসেল মিয়াঃ নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদী-৪ মনোহরদী ও বেলাব উপজেলা নিয়ে এই আসন শুরু হয়েছে।সম্ভাব্য প্রাথীরা নানা অসিলায় ভোটারদের দ্বাওে দ¦ারে যাচ্ছেন তাদের মন জয়ে ।এলাকার কর্মীদের নিয় ঘন ঘন বসা পাশা পাশি প্রাথীরা যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক,ধমীয় ও রাজনৈতিক কমসুচিতে ।নানা উপলক্ষে সম্ভাব্য প্রাথীদের ছবি সংবলিত পোষ্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলকা ।

ভোটারওে মন জয়ে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ । অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন প্রচাওে কৌশল হিসেবে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রাথীদের এ তৎপরতায় নড়েচড়ে বসেছেন ভোটাররাও । হাট বাজার ও চায়ের আড্ডায় ও থাকছে নির্বাচনী আলাপ । কোন দলের কে প্রাথী হচ্ছেন কেন হচ্ছেন তানিয়ে ও কথাবার্তা হচ্ছে ।  দুটি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত । এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ১৯৭৫-পরবর্তী সময় থেকে নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থানের পেছনে তাঁর ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা অস্বীকার করে না দলীয় নেতাকর্মীরাও । তাঁর হাত দিয়েই এ এলাকায় আওয়ামী লীগের শক্ত ভিত তৈরি হয়েছে।

আবার রাস্তা ঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলনামূলক কম এবং দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। তবে দলের স্থানীয় অনেক নেতাই বলেছেন, এ আসনে হুমায়ূনের বিকল্প নেই। যদিও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন আরো চার নেতা।আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। এই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন যোগ্য নেতা বলেও মনে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম দিকে এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের যোগাযোগ কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি বেড়েছে দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ। সক্রিয় হয়ে ওঠেন এলাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজেও। স্কুল, কলেজ, রাস্তাাঘাট সংস্কার, শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি। তবে সংসদ সদস্যের পাশাপাশি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নূরউদ্দিন খানের ভাতিজা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বীরু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন।এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আবদুর রউফ সরদার, জেলা শাখার সাবেক উপদেষ্টা শিল্পপতি অহিদুল হক আসলাম সানী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলামও মনোনয়নপ্রত্যাশী।সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে রাস্তাাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অবকাঠামোসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। এই বৃহৎ আসনে শতভাগ উন্নয়ন সম্পন্ন করা অনেকটা কঠিন। এর পরও সরকার থেকে যতটুকু সম্ভব বরাদ্দ এনে কাজ করেছি। আমার দুটি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। আর দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার প্রশ্নই আসে না। কেননা যারা দলের ত্যাগী নেতাকর্মী তারা সবাই আমার সঙ্গে আছে।

আমি তৃণমূলের রাজনীতি থেকেই নেতা হয়েছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমার আপনজন। ’মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বড় দল হিসেবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকতেই পারে ‘দলীয়ভাবে নূরুল মজিদ হুমায়ূন শুধু মনোহরদী-বেলাব আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি পুরো নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক, কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁর ত্যাগ-তীতিক্ষায় আজ আওয়ামী লীগের এই শক্ত অবস্থান। আগামী নির্বাচনে ওনাকে ছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করছি না। ’সাইফুল ইসলাম খান বীরু বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ গঠনের পর থেকে টানা চারবার আমি মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান। এই এলাকার জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে বারবার নির্বাচিত করে এই উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে সে প্রত্যাশা পূরণ করার সুযোগ হয় না। তাই তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি কারো বদনাম করছি না। তবে আমি মনে করছি আমার কর্মস্পৃহা, রাজনৈতিক দক্ষতা বিবেচনায় এই আসনে সবার থেকে যোগ্য আমি। ’যুবলীগ নেতা কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও মনোহরদী-বেলাবতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি বলে আমি মনে করি। তাই জননেত্রীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি ।

বিএনপিঃ বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। তিনি এলাকার উন্নয়ন করে সব মহলের প্রশংসা কুড়ান। কিন্তু এক-এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কারের আহ্বানকে সমর্থন দেন তিনি। ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে দল সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরাগভাজন হন বকুল সে কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাঁর পরিবর্তে মনোনয়ন দেয় জয়নাল আবেদীনকে।  নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি জয়নাল আবেদীনের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে গত ১০ বছরেও দলটি সুসংগঠিত হয়নি। এলাকায় দলীয় কোনো কর্মসূচিই পালন করতে পারে না বিএনপি।

এ কারণে নেতাকর্মীদের অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছে সংস্কারপন্থী নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের। তাঁকে দলে ফিরে পেলে আসনটি পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। । তাই জননেত্রীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। এদিকে ’বিএনপির  এক-এগারোতে সংস্কারপন্থী নেতা বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সমর্থন ও দল সম্পর্কে দেওয়া বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েন সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। সময়ের পালাবদলে নিজের ভুল উপলব্ধি করছেন বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্য। এখন দলের মূল ধারায় ফিরতে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বকুল। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতে সেই স্থানটিদখলে চলে গেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীন ১০ দরে বছরেও দলটি সুসংগঠিত করতে পারনে নাই। নবম সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি। এতে দ্বিধাবিভক্তি দলের নেতাকর্মীরা।

 যদিও জয়নাল নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।মনোনয়ন না পেলেও হাল ছাড়েননি বকুল। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু উপজেলা বিএনপির একটি বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছেন জয়নাল আবেদীন। ইতিমধ্যে জয়নাল তাঁর পছন্দমাফিক লোকের মাধ্যমে মনোহরদী ও বেলাব উপজেলা বিএনপি এবং দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গুছিয়ে নিয়েছেন।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বকুল ও জয়নালের এ ‘লড়াইয়ে’ দুই উপজেলায়ই প্রাণ হারিয়েছে বিএনপি, যার প্রভাব পড়েছে সর্বশেষ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। বিএনপির বেশির ভাগ প্রার্থীই পরাজিত হন।মনোহরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার কাজল বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপি অগোছালো। যাঁরা পদ ধরে রেখেছেন তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে গত ১০ বছরে দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁরা নিজ উপজেলায় দলীয় কার্যক্রম করতে না পেরে জেলায় গিয়ে শরিক হচ্ছেন। মনোহরদী-বেলাব বিএনপিতে বকুলের বিকল্প নেই। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার যে কলাকৌশল, তা তিনি জানেন। ’সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করে মনোহরদী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল খালেক বলেন, ‘একজন নেতৃত্বদানকারী নেতা (জয়নাল আবেদীন) যদি নিজের এলাকা রেখে জেলায় গিয়ে দলের কার্যক্রমে শরিক হন সেটা সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রকাশ। কারণ উনি নিজ এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালন করলে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবে।

সে বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না। নেত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন আমি তাঁর পক্ষেই কাজ করব। ’বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ‘মনোহরদী-বেলাবতে বিএনপিও আছে আর আমার নিজস্ব জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শূন্যের কোঠায়। ঘরে বসে বসে কমিটি করায় যোগ্য নেতৃত্ব বাদ পড়েছে। ’১০ বছর ধরে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খাদে পড়ে আছে—এমন মন্তব্য করে বকুল বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নেত্রী আমাকে কাজ করতে বলেছেন। তাই আমি নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে কাজ করছি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে নেত্রী আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। ’বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে যথাস্থানে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায় না। ’জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার বলেন, ‘এখানে আমাদের দলে তেমন কোন্দল নেই। তবে সাংগঠনিক একটু দুর্বলতা আছে।

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে।বড় দল হিসেবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকতেই পারে। সংস্কারবাদী নেতা সরদার বকুলকে দলের চেয়ারপারসন ডেকেছেন বলে শুনেছি। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে সে বিষয়ে আমরা কী করব, এমন কোনো নির্দেশনা পাইনি। ’এ ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল দলের মনোনয়ন চান বলে আলোচনা আছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া ও মনোহরদী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. কামাল হোসেন আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চান বলে আলোচনা রয়েছে ।