Fri. May 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলাবাজার২৪. সোমবার ১৩ আগস্ট ,২০১৮ঃ  স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে সংসার। এক সংসারে যা কিছু ঘটছে বা ঘটবে, তা স্বামী স্ত্রী একে অপরকে বলবে, শেয়ার করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝে এমনও হয় যে কোনো বিষয়ে স্বামী স্ত্রীর অমতে কিংবা না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ নিয়ে শুরু হয় বিরোধ। কিন্তু স্বামী কি আসলেই স্ত্রীর অমতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে? নাকি এমন কিছু বিষয় আছে যে স্ত্রীকে জানাতে হবে এবং আইনত তা করতে স্বামী বাধ্য? জেনে নিই।

স্ত্রীর অধিকার বিষয়ে
বৈবাহিক জীবন শুরু করার পর থেকেই স্ত্রীর কিছু আইনগত অধিকার জন্মায় এবং তা থেকে কোনোভাবেই তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। যেমন দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার। স্ত্রীকে বঞ্চিত করা যাবে না। স্ত্রীকে ভরণপোষণ থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না। কোনোভাবে বিয়ে বলবৎ থাকুক আর না থাকুক, বৈধ কারণ ছাড়া সন্তানকে কাছে রাখা থেকেও বঞ্চিত করা যায় না। স্ত্রীর নামে যদি কোনো সম্পত্তি থাকে, তার অমতে এ সম্পত্তি বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া যায় না। যদি স্ত্রী কোনো আমমোক্তারের মাধ্যমে ক্ষমতা দিয়ে থাকেন স্বামীকে, সে ক্ষেত্রে কেবল যে বিষয়ে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে শুধু শর্ত অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জমিজমাও বিক্রয় করতে পারবেন, যদি ক্ষমতা দেওয়া থাকে।

আমমোক্তার অবশ্যই আইন অনুযায়ী সম্পাদন করতে হবে। স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় বিশেষ করে মুসলমান হলে তাঁর সম্পত্তি স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বা সম্মতি ছাড়া পুরো সম্পত্তি উইল করতে পারবেন না। কারণ, স্ত্রী হচ্ছেন তাঁর উত্তরাধিকার। তবে স্বামী তাঁর নিজের নামে থাকা সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। এতে স্ত্রীর অনুমতি লাগবে না। স্ত্রীর নামে কোনো ব্যাংক হিসাব খুললে এবং তাতে টাকা জমা রাখলে কিংবা সঞ্চয়পত্র খুললে তা স্বামী চালু করলেও স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া এবং স্ত্রী ছাড়া স্বামী তা থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। স্ত্রী হচ্ছেন সেই সম্পত্তির মালিক। হিসাবটি স্ত্রীর নামে খোলা হয়েছে। স্ত্রীকে কোনো কিছু উপহার দিলে তা স্ত্রীরই সম্পত্তি। তাঁর অমতে তা সরিয়ে নেওয়া যায় না। যেমন স্ত্রীকে যদি কোনো স্বর্ণালংকার দিলে তা স্ত্রীরই সম্পত্তি। তবে উপহারের বিষয়টি যতটা না আইনি, তার চেয়ে নৈতিকতাই বেশি জড়িত। স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট বা জমি কেনা হলে তা তাঁর সম্পত্তি। স্ত্রী ছাড়া কেউ তা হস্তান্তর করতে পারবে না। তবে আলোচ্য বিষয়গুলো কিছু নির্দিষ্ট বিষয় বাদে স্বামী বা স্ত্রী নিজেদের অমতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তখন এ সম্মতির সঙ্গে নৈতিকতার প্রশ্ন জড়িত।

স্ত্রীর অমতে বিয়ে!
আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী সম্মতি না দিলে তা কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। তবে কারও যদি স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন, সেই এলাকার সালিসি পরিষদের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে। সালিসি পরিষদে যদি বর্তমান স্ত্রী অনুমতি প্রদান না করেন, তাহলে কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না।
সালিস পরিষদ এবং স্ত্রীর অমতে বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যদি আগের বিয়ের কথা গোপন করেন, তাহলেও দণ্ডবিধি অনুযায়ী কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।