Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪.রবিবার,২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮: বিরোধী মত ও শক্তিকে কষ্ট দেয়া, জুলুম করা আওয়ামী লীগের স্বধর্ম মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, গায়েবী মামলার ছড়াছড়িতে সারাদেশে বিরাজ করছে এক আতঙ্কের পরিবেশ। 

রবিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গত তিন চার দিনে রাজধানীর দুটি থানায় ৭টি মামলা করা হয়েছে, এসব মামলায় বিএনপি’র আইনজীবীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ১৫ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে এই ভিত্তিহীন মামলাগুলো করা হয়েছে খিলগাঁও, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি থানায়।

এছাড়াও বরগুনার পাথরঘাটায় ৪০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। সারাদেশব্যাপী প্রায় ১৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গায়েবী মামলার ছড়াছড়িতে সারাদেশে বিরাজ করছে এক আতঙ্কের পরিবেশ। মামলার ব্যাপক বিস্তারে সরকার যেন জনগণের ওপর প্রেতাত্মাসূলভ আচরণ করছে। মূলত: এইদেশে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বরকত নেই, আছে শুধু মিথ্যা মামলার বরকত। বিরোধী মত ও শক্তিকে কষ্ট দেয়া, জুলুম করা আওয়ামী লীগের স্বধর্ম। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পর্যদুস্ত করার জন্য সরকার এহেন অমানবিক পদ্ধতি নেই, যা তারা ব্যবহার করে না। আমরা এরই চরম প্রকাশ দেখতে পায়-২১শে আগষ্ট বোমা হামলা মামলায় দীর্ঘদিন পর অধিকতর তদন্তের নামে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ার‌্যান জনাব তারেক রহমানকে জড়ানোর ঘটনায়। এর পূর্বে দুইবার চার্জাশটে জনাব তারেক রহমানের নাম ছিল না। শুধুমাত্র প্রতিহিংসা পূরণের জন্য টার্গেট করেই সম্পুরক চার্জশিটে জনাব তারেক রহমানের নাম উক্ত মামলায় জড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বেপরোয়া ক্ষমতার আস্ফালনে আইন আদালতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, চুক্তিভিত্তিক তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দ কর্তৃক তথাকথিত নিখুঁত ও গভীর তদন্ত কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সরকারী অনেক দলিল দস্তাবেজ হয় গায়েব অথবা সৃজন পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন-

বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অনুষঙ্গ ‘কেন পুলিশকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে সভাস্থল পরিবর্তন করা হলো, সে বিষয়ে কে বা কারা সম্পৃক্ত’ (অর্থাৎ মুক্তাঙ্গন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ)-এই মূল্যবান তথ্যটি উদঘাটনের ক্ষেত্রে তিনি বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেননি। বরং এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেই তিনি ক্ষেপে যেতেন বলে শোনা যায়।

কাহার আকন্দের দাখিলকৃত চার্জশিটের বর্ণনানুযায়ী দেখা যায় যে, হাওয়া ভবনে তথাকথিত ষড়যন্ত্রমূলক সভা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যত জন (৮/১০ জন) সাক্ষীকে তিনি ভয় দেখিয়ে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছেন। তাদের একজনও কত তারিয়ে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেন নি। কারণ ‘এত বড় বড় পদের মানুষদের সাথে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা’ সেই সভার তারিখ কেউ মনে রাখতে পারবে না-এটা রীতিমতো বিস্ময়কর ঘটনা।

তিনি বলেন, লক্ষ্যনীয় যে, এ সকল সাক্ষীদের মধ্যে দু’জন উর্দ্ধতন সামরিক কর্মকর্তা (মেঃ জেঃ রাজ্জাকুল হায়দার ও ব্রিঃ জেঃ রহিম), ড্রাইভার, বডিগার্ডরাও রয়েছে। যারা তাদের নিজেদের ট্যুর ডায়েরী বা ব্যবহৃত গাড়ীর লকবুক দেখেও সেই তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারা খুবই সম্ভব ছিল।

তাহলে কেন তাদেরকে দিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তারিখের কথা বলা হয়নি ?

বলানো হয়নি এ কারণে যে, তাহলে দেখা যেত-কেউ হয়তো দেশেই ছিলেন না, অথবা প্রকাশ্য এমন অন্য কোন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন যা শত শত মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে বা পত্র পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে। আর সেক্ষেত্রে তো সৃজন করা সাক্ষ্যের পুরোটাই বরবাদ হয়ে যেতো।

এই কারণে সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে বলা হয়েছে ‘অমুক মাসের মাঝামাঝি সময়ে, তমুক মাসের কোন এক দিন’ ইত্যাদি। হায়রে আওয়ামী তদন্ত ও বিচারের কি রমরমা অবস্থা !

ফৌজদারী অপরাধের মূলনীতি হলো, প্রতিটি তদন্ত ও বিচার হতে হয় সুনির্দিষ্ট এবং সন্দেহাতীত। যেখানে কল্পনা বা অনুমানের কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন,২১শে আগষ্ট বোমা হামলায় একটি রহস্যাবৃত ঘটনা বোমাবাজী শুরু হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত নেতাকর্মীরা নেত্রীকে ঘিরে ধরে তাঁকে তাঁর বুলেটপ্রুফ জিপে উঠিয়ে দেয়। ঐ সময় জীপকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। সেই গুলিতে তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, প্রাক্তন সেনা সদস্য মাহবুব নিহত হয়। বুলেটপ্রুফ জীপটির জানালার কাঁচ ভেঙ্গে যায়। গাড়ীর চাকা পাংচার হয়ে যায়। ঐ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ধানমন্ডীর ৫ নং রোডের সুধাসদনে পৌঁছে দেয়া হয়।

শেখ হাসিনার দেহরক্ষী, প্রাক্তন সেনা হাবিলদার মাহবুব কার গুলিতে মারা গেলেন তা নিরুপণে এসপি কাহারের কোন আগ্রহ-তৎপরতা যেমন পরিলক্ষিত হয়নি, তেমনি বুলেটপ্রুপ গাড়ীর গ্লাস কিসের আঘাতে ভেঙ্গে গেল  বা এমন ওজনবিশিষ্ট কোন গাড়ী পাংচার টায়ার নিয়ে কংক্রীটের রাস্তার ওপর দিয়ে ৫ কিলোমিটার চালিয়ে ধানমন্ডীর সুধাসদনে পৌঁছলো তাও পর্যালোচনা করা হয়নি।

উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনারই দাবি করা আন্তর্জাতিক তদন্ত অনুষ্ঠানকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই দল ঘটনাস্থল সরেজমিনে তদন্তের পর যখন সেই গাড়ীটি পরিদর্শন করতে চেয়েছিলো, তা পরিদর্শন করতে দিতে শেখ হাসিনা অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন এই অস্বীকৃতি ? তারও কোন সুরাহা কাহার আকন্দের তদন্তে হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এফবিআই দলকে তদন্ত সহায়তা না করায় অবশেষে তারা তাদের তদন্তকার্য অসমাপ্ত রেখেই ফিরে চলে যায়।

২১শে আগষ্ট বোমা হামলার পুরো বিষয়টাই একটি প্রহলিকা। আওয়ামী রাজনীতির কুটিল পাটিগণিত। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার দেশীয় ও বৈদেশিক চক্রান্তের বিপজ্জনক ব্লুপ্রিন্ট। বিএনপি-কে নিশ্চিহ্ন করার নানাবিধ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২১শে আগষ্ট বোমা হামলা মামলায় সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আইন আদালতকে। কারণ আইন আদালত এখন সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতের মুঠোয়।

রিজভী আহমেদ বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য করার পর সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থে এসকে সিনহা সাহেব এর প্রতি সরকারের আচরণের যে ঘটনাগুলো বেরিয়ে আসছে তাতে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যই সাবেক প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। আর এটি করতে গিয়ে বিশ^দরবারে শেখ হাসিনা কলঙ্কিত হয়েছেন। এই ঘটনা বিচার বিভাগের ওপর ব্যক্তি শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর আক্রমণ। বিচার বিভাগের ওপর আধিপত্য বিস্তারই এই আক্রমণের মূল লক্ষ্য। জোর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এখন স¤্রাজ্ঞীতে পরিণত হয়েছেন। সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দিতে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রের মুখোশটুকু ছুঁড়ে ফেলে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন মুছে দিয়েছেন। ফলে স¤্রাজ্ঞী’র শাসন এখন পুরোদমে চলছে।

 

চাপাইনবাবগঞ্জ জেলাধীন শিবগঞ্জ উপজেলায় গ্রেফতারঃ 

মোঃ তৌহিদ মিয়া সভাপতি মোবারকপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও ৩ বারের চেয়ারম্যান, তার দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে প্রকাশ্যে কোর্টে চালান দেয়। মোঃ মোখলেছুর রহমান সহ-সভাপতি বিনোদ পুর ইউনিয়ন।মোঃ আঃ মালেক প্রচার সম্পাদক লাভলা ইউনিয়ন শিবগঞ্জ সহ মোট ৫০জনের অধিককে গ্রেফতার করে ওসি শিকদার মশিউর তাদের উপর নির্যাতন চালায়।

মেহের পুর জেলায়  গ্রেফতার।ঃ

১) মো ঃ আঃ সবুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক দল। ২) মোঃ আঃ ছালাম বিএনপি নেতাসহ ৪ জন গ্রেফতার।

২) গাইবান্ধা জেলাধীন গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল মজিদ, থানা ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান হিটলু ও মাহমুদ পাঠান বিপুলকে গতকাল ভৌতিক মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আবুল খায়ের ভুইয়া, এবিএম মোশারফ হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।