Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শনিবার, ০৪মে ২০১৯ঃ  ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শক্তিশালী জোয়ারে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠির অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার সকালে ভারতেও ওডিসা রাজ্যে আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণী। এটি কলকাতা হয়ে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল পার হয়ে আসাম-ত্রিপুরার দিকে চলে যাবে জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে ফণীর প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে সমুদ্র উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ দেশের অনেক জেলাতেই। প্রায় ২০ দিন পর বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকাতে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের চাপে পটুয়াখালীতে বেশ কিছু পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে তিনটি উপজেলার অন্তত ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলি জমি। অন্যদিকে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায় আগে থেকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশে বলেশ্বর নদ উপচে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  বাগেরহাটে সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। থেমে থেমে দমকা বাতাসে আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলে। নদ-নদীতে জোয়ারের পানির চাপ বেড়েছে।

ঝড়ের আগেই এমন পরিস্থিতি সিডর ও আইলায় বিধ্বস্ত এই জনপদে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, সাতঘর ও দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের শতাধিক পরিবার এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগেই উপকূলীয় ১৯ জেলার ২১ থেকে ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছে সরকার।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে আছি। প্রায় আড়াইহাজার মানুষ বাস করে এই এলাকায়।’

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারে বাঁধ আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। নদীর পানি বেড়ে পাওয়ায় ওই পয়েন্ট দিয়ে গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।

‘কলাপাড়ার নিজামপুর পয়েন্ট দিয়েও পানি ঢুকছে গ্রামে। আমরা এলাকায় আছি। মানুষ যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই চেষ্টা করছি।’

মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর দেউলী সুবিধখালী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, সকাল থেকে জোয়ারের চাপে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।

এক পর্যায়ে মেহেন্দিয়াবাদ, চরখালী, গোলখালী রানীপুরসহ পাচঁটি গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘরবাড়িতে পানি ঢোকার পাশাপাশি মুগডালের ক্ষেত তলিয়ে যায়।

জোয়ারে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধের দেড় কিলোমিটার ফাঁকা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে লালুয়ার চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মাঝের হাওলা, ছোট ৫ নং, বড় ৫নং, নয়াকাটা, সেনের হাওলাসহ অন্তত ১০টি গ্রাম এবং মহিপুরের নিজামপুর পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে মহিপুরের নিজামপুর কমরপুর, সুধিরপুরসহ ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ উপচে ফুলতলা, মাটিভাঙ্গাঁ, ভাজনাসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পশুর, মোংলা, বলেশ্বর, ভৈরব ও পানগুছিতে পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পানি আরও বাড়তে পারে। জোয়ারের পানির চাপে শরণখোলা বাঁধের একটি নিচু অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানলে সুন্দরবন–সংলগ্ন চারটি উপজেলায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব উপজেলার জানমালের ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রশাসন কাজ করছে। এসব এলাকায় প্রায় চার শ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শরণখোলা ও রামপাল উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দাকে সরিয়ে আনার কাজ আমরা শুরু করেছি। শরণখোলা ও মোংলা উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশুর, মোংলা, বলেশ্বর, ভৈরব ও পানগুছি নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পানি আরও বাড়তে পারে। জোয়ারের পানির চাপে শরণখোলায় বাঁধের নিচু অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।”

এছাড়াও ফনির আঘাতের আগেই সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ও আশাশুনিতে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার সঙ্গে গ্রামে পানি ঢুকছে। সেই সঙ্গে নদীতে দেখা দিয়েছে উত্তাল ঢেউ।

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল বলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ঢেউয়ে দূর্গাবাটিতে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, গ্রামে ঢুকছে পানি।

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ফণীর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সকাল থেকে, সেই সঙ্গে চলছে দমকা বাতাস।

জেলার সুগন্ধা, বিশখালী আর হলতা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কমপক্ষে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি বেড়ি বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।