Wed. Aug 27th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার,১২জুলাই,২০১৯ঃ ভারতকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড ফাইনাল নিশ্চিত করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এসেছে দেশের মানুষের ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া। কিন্তু শুধুই কি ক্রিকেট রাজনীতির কারণে ভারতবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে বাংলাদেশের মানুষ?

এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তবে অনেকেই বলছেন ক্রিকেটেই প্রধান কারণ। ভারতের খেলোয়ারদের খেলার বাইরে গিয়ে অপেশাদার আচরণ অনেক বাংলাদেশি সমর্থককে আহত করেছে বহুবার।

এছাড়া আগে পাক-ভারতের খেলা কেন্দ্রীক একটি উত্তেজনা ছিল দেশে। কিন্তু সেটি এখন আর তেমন দেখা যায় না। দুই দলের খেলায় একপেশে আধিপত্য বিচার করছে ভারত। কিন্তু অন্যদিকে বাংলাদেশ এখন নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে সামর্থ হচ্ছে।

ক্রিকেটে যে কাউকে  হারানোর মত ক্ষমতা রাখে তারা। অন্যদিকে ক্রিকেট ছাড়াও আঞ্চলিক রাজনীতিও  ভারতবিদ্বেষী মনোভাবের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন অনেকে।

যদিও ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সব কিছু দিয়ে সাহায্য করেছিল। বর্তমানেও বাংলাদেশের সঙ্গে সেই সম্পর্ক এখনো বজায় আছে।

কিন্তু খেলা নিয়ে কেন ভারতবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ? এ প্রশ্ন এখন নানা মহলে।

সীমান্তে সংঘাত, আঞ্চলিক রাজনীতি ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য ও ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের ক্রমাগত উত্থানের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অবচেতনভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হয়েছে, যা খেলার ফলাফলের পর প্রকাশ পায় বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক রাজীব নন্দী।

তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকার কারণে মানুষের এই জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশটা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক তীব্র হয়। উদাহরণ, “সোশ্যাল মিডিয়া হলো আগুনে ঘি ঢালার মতো।” “বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, শিশু নির্যাতনসহ বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো নিয়ে তরুণ সমাজ সামাজিক মাধ্যমে খুব একটা আলোচনা করেনি, যতটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের হার নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছে।”

ক্রিকেটের বাইরে গিয়ে বিদ্বেষের কারণ হিসেবে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ভারত হারলে ভারতের কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী মানুষের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ কাজ করে, আবার বাংলাদেশ যখন ইংল্যান্ডকে চট্টগ্রাম টেস্টে হারায় তখন চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন হয় যে `ব্রিটিশ বধ।` আবার অনেকে বলেন, পাকিস্তানকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে হারালে একাত্তরের বিজয়ের আনন্দ পায়।’ এই বিষয়গুলোকে সাধারণ মানুষের `ছদ্ম বাস্তবতা` তৈরির প্রবণতা থেকে আসে বলে মনে করেন তিনি। যেখানে বাস্তব সমস্যা সমাধান না করে জাতীয়তাবাদী বা দেশাত্মোধক চিন্তাধারা থেকে জন্ম নেওয়া অপ্রয়োজনীয় আবেগকে প্রাধান্য দেয় মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবায়েদা নাসরিনের বলেন, উপমহাদেশে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টার কারণেও মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসেব ছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক জায়গা থেকেও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

নাসরিন বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে, দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হওয়ার কারণে এখনও উপমহাদেশের দেশগুলোতে ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ ‘তাই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা বিজেপি যখন ভারতে নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতন হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতাও প্রভাবিত হয়।’

খেলা কেন্দ্রীক ভারত বিদ্বেষী মনোভাবকে প্রাধান্য দিয়ে মাজিদুল ইসলাম মাহি নামে একজন লিখেছেন, ‘২০১৫ সালে আম্পায়ারের ভারতের পক্ষ নেয়া, মুশফিকের আউটে কোহলির আচরণ, ধোনির আচরণ এসব কারণে এদেশে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমর্থন দিন দিন কমেছে। অথচ একসময় ভারতীয় জয়ে গ্রামে মিছিল হতো, রাতে খিচুরি রান্না করে খাওয়া হতো। এখন ভারতীয় ক্রিকেট খেলোয়ারদের অ-খেলোয়ার সুলভ আচরণে এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারত বিরোধী মনোভাব ধারণ করছে। তাদের পরাজয় উদযাপন করছে। বিপিএলে ভারতীয় খেলোয়ারদের ছাড়পত্র না দেয়াও ভারত দলের সমর্থন কমারও অন্যতম একটি কারণ।’

আজিজা আইরিন নামে আরেকজন লিখেছেন, “ভারতের দর্প ভেঙে চুরমার’ ‘আমি খুব খুশি। নিউজিল্যান্ডকে অভিনন্দন।’

অন্যদিকে বিশ্বকাপে আইসিসি চেয়েছে ভারত ফাইনাল খেলুক। স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, ভারত ফাইনাল খেললে তাদের দর্শক, বড় বড় বিজ্ঞাপন সংস্থা, সম্প্রচার স্বত্বের হিসেবে ব্যবসায়িকভাবেই লাভবান হবে আইসিসি। আর তাই সব মিলিয়ে ভারতের সমর্থক  নিজ দেশ ছাড়াও  তাদের সমর্থন বিভিন্ন দেশেও এসব কারণে লোপ পাচ্ছে।  আর বাংলাদেশে তো রীতিমত মানুষ ভারতের পরাজয়কে উৎসবে পরিণত করেছে। যার রেশ এখনো কাটেনি।