খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার,২৬সেপ্টেম্বর,২০১৯ঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম কলিমঃ ২৬শে সেপটেম্বর ২০১৯ আর্ন্তজাতিক গর্ভনিরোধ দিবস উপলক্ষে, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আর্ন্তজাতিক গর্ভনিরোধ দিবস উদযাপন করলো ওজিএসবি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশগ্রহনে International Federation of Gynecology & Obstetrics (FIGO) I Obstetrical & Gynecological Society of Bangladesh (OGSB) এর কারিগরী ও আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত দিবসটি উদযাপিত হয়েছে। আর্ন্তজাতিক গর্ভনিরোধ দিবস ২০০৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপি দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
স্বাস্থ্য পুষ্টি জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে আনা এবং জন্ম বিরতিকরন নিশ্চিতকরন সেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা এবং ইপিআই সেবার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে আনা এবং জন্ম বিরতিকরন সেবা নিশ্চিতকরনে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।
আর্ন্তজাতিক গর্ভনিরোধ দিবস ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফেনী-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য শিরিন আকতার।
অনুষ্ঠানের শেষ অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আশরাফুন্নেসা। অনুষ্ঠানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পক্ষে মূল নিবন্ধ পেশ করেন লাইন ডিরেক্টর ডা: মো: মইনুদ্দীন আহমেদ । ওজিএসবি’র পক্ষে নিবন্ধ পেশ করেন অধ্যাপক পারভীন ফাতিমা, ন্যাশনাল কোর্ডিনেটর, ওজিএসবি ফিগো পিপিআইউডি প্রজেক্ট।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের বক্তারা বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন প্রকল্প এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পরিবার পরিকল্পনার সফলতার চিত্র তু্লে ধরেন।
প্রধান অতিথি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আশরাফুন্নেসা বলেন, অসাবধানে বা অপরিকল্পিত ভাবে যৌন সঙ্গম হয়ে যেতেই পারে। এই পরিস্থিতিতে গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে বার্থ কন্ট্রোল পিল বা জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধের সাহায্য নেন অধিকাংশ নারী।তবে তাদের জেনে নেওয়া উচিৎ বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ গ্রহণের আগে ও পরের দিক গুলো।
যেমনঃ-
১) বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধকে অনেকে ‘মর্নিং আফটার পিল’ও বলে থাকেন। তবে এই ওষুধ সঙ্গমের পরদিন সকালেই খেতে হবে এমন কোনও কথা নেই। রাতে সঙ্গমের পরও খেতে পারেন। যত তাড়াতাড়ি খাবেন তত ভাল কাজ করবে বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ।
২) বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ গর্ভপাত করায় না, শুধু ডিম্বস্ফোটন বা ওভিউলেশনের সময় পিছিয়ে দিয়ে গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। তাই গর্ভধারণের পর এই জাতীয় অষুধ খেলে কোনও কাজ হবে না।
৩) বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ খেলে ওজন বেড়ে যাবে ভেবে অনেকেই ভয় পান। যদিও এর সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
৪) কোনও বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধই গর্ভধারণ রোধ করার ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি বা প্রতিশ্রুতি দেয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরও প্রেগন্যান্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৫) বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ার ফলে আপনার পিরিয়ড সাইকেল অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গেই গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ার ফলে মাথা ঘোরা, বমির মতো সমস্যা হতে পারে।
৬) অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রুখতে বার্থ কন্ট্রোল পিল বা গর্ভনিরোধক ওষুধই শেষ কথা নয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর হল কপার আইইউডি। এটি ১০ বছর পর্যন্ত প্রেগন্যান্সি রুখতে সক্ষম।
সব শেষে একটা জরুরি কথা! অপরিকল্পিত ভাবে যৌন সঙ্গমের পর প্রথমেই গর্ভনিরোধক ওষুধ না খেয়ে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
মাতৃসাস্থ্য ও প্রসব পরর্বতি জন্ম বিরতিকরন নিশ্চিতকরন সেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার প্রত্যয়ে ওজিএসবি সবসময়ই দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওজিএসবি বাংলাদেশের ৬টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগে শিশু ডেলিভারীর পর রোগীকে প্রসব পরর্বতি পরিবার পরিকল্পনা সেবা সম্পর্কে কাউন্সেলিং ও সেবা প্রদান করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প হতে দুই লাখের অধিক সংখ্যক নারীকে প্রসব পরর্বতি পরিবার পরিকল্পনা সেবা সম্পর্কে কাউন্সেলিং এবং তের হাজারের বেশী সংখ্যক Post-partum IUD স্থাপন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওজিএসবির সভাপতি প্রফেসর সামিনা চৌধুরী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: মো: শরীফ, লাইন ডিরেক্টর ডা: মো: মইনুদ্দীন আহমেদ, ডা: সারোয়ার বারী সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন প্রফেসর সালেহা বেগম চৌধুরী, মহাসচিব, ওজিএসবি।