Wed. Aug 27th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,মঙ্গলবার,২৫ফেব্রুয়ারি,২০২০ঃ অনেকে ঘুমের ঘোরে রুমের বাইরে চলে যান, নিজের মনে কথা বলেন, কাঁদেন আবার ঘুমিয়ে পড়েন আপনাতেই। আবার ঘুম থেকে উঠে তার কিছুই মনে থাকে না, কী করেছেন, কোথায় গেছেন কিছুই তিনি মনে করতে পারেন না। বেশ রহস্যময় ব্যাপার। অনেকে ব্যাপারটির ভৌতিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

ব্যাপারটি যতই রহস্যময় হোক না কেন, বিজ্ঞান ব্যাপারটিকে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যার আলোকে বিশ্নেষণ করেছে। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ অবস্থাকে বলা হয় সমনাবুলিজম বা ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটা, ইংলিশে স্লিপ ওয়াকিং। সাধারণত ছোটদের মাঝে দেখা গেলেও বড়রাও আক্রান্ত হতে পারেন স্লিপ ওয়াকিংয়ে।

যারা স্লিপ ওয়াকিং করে থাকেন তারা আর সবার মতোই ঘুমাতে যান বিছানায়, ঘুমিয়ে পড়েন ঠিক মতোই। কয়েক ঘণ্টার মাঝেই শুরু হয় আসল খেলা! তারা কথা বলা শুরু করেন আপন মনে, হয়তো কাঁদেন বা চিৎকার করেন, উঠে পড়েন ঘুম থেকে। চোখ খুলে তাকান কিন্তু চেহারা থাকে ভাবলেশহীন, অভিব্যক্তিহীন। তিনি কী করছেন, কী বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন- সব করছেন নিজের অজান্তে।

হয়তো ঘরের মাঝে হাঁটছেন তিনি, দরজা খুলে যাইরে চলে যাচ্ছেন, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়ছেন নিজের অগোচরে, কাপড় পরছেন বা খুলছেন, প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজও করছেন। এমন সময় তাদের সজাগ করতে গেলে হয়তো অনেকে দারুণ বিক্ষিপ্ত আচরণ করেন, চিৎকার করেন, ধাতস্থ হতে সময় লাগে তাদের।সবার মাঝে একটা বিষয়ে মিল থাকে, তারা ঘুম ভেঙে আর মনে করতে পারেন না ঘুমের মাঝে কী কী করেছেন বা বলেছেন।

  • স্লিপ ওয়াকিংয়ের কারণ

-খুব ক্লান্ত দেহে বিছানায় গেলে, সারাদিন অধিক খাটাখাটুনি হলে

-উত্তেজনা, ভয়, মানসিক অস্থিরতা থাকলে

-প্রতিদিনের ঘুম যদি হয় অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত

-স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মাঝে বিশেষ ধরনের শ্বাসবদ্ধতা থাকলে

-কিছু ওষুধের কারণেও ঘটতে পারে এমন ব্যাপার

-আবার পরিবারে কারও থেকে থাকলে অর্থাৎ মা-বাবার থেকে থাকলে সন্তানদেরও স্লিপ ওয়াকিং করার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

  • স্লিপ ওয়াকিং থামাতে করণীয়

প্রথমেই হতে হবে সতর্ক, একা থাকতে দেওয়া ঠিক হবে না এদের। অনেকে দরজা খুলে বাইরে চলে যান, রেলিং টপকে পরে যান নিচে অথবা রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনায় পতিত হন। এদের জন্য ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করার সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যেন বাইরে যেতে না পারেন। হাঁটতে দেখলে তাদের বিছানায় নিয়ে যান, আবার শুইয়ে দিন মমতা মিশিয়ে।

অনেকের ঘুম নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। কিছু ওষুধ খেলে স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে। এসব ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

স্লিপ এপনিয়া একটা শ্বাসবদ্ধতার সমস্যা, যা ঘুমের মধ্যে হয়। স্লিপ এপনিয়ার চিকিৎসা করলে অনেকের স্লিপ ওয়াকিং সমস্যার সমাধান হয় বলে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।

কোনো ধরনের ধারালো বস্তু, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি ঘরে রাখা যাবে না। বাচ্চাদের মা-বাবা একটা ডায়েরি করতে পারেন, প্রতিদিন বাচ্চা কখন ঘুমাতে যাচ্ছে এবং কখন তার সমস্যা শুরু হচ্ছে, সেটা লিপিবদ্ধ শুরু করুন। স্লিপ ওয়াকিং শুরু হওয়ার ১০-১৫ দিন আগে তাকে উঠিয়ে দিন, ঘুম ভাঙিয়ে দিন। ৫ মিনিট জাগিয়ে রেখে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিন। এভাবে অভ্যাস পরিবর্তনের ফল কাজ হতে পারে। স্লিপ ওয়াকিং নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্লিপ ওয়াকিং খুব কম মানুষেরই হয় এবং এটা মারাত্মক কোনো মানসিক সমস্যা নয়। শুধু সচেতনতা এবং যত্নবান হলেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ রাখা সম্ভব।