Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
songsod budget

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়টি তুলে ধরেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৯ শতাংশ।

পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ হয়েছে দুই লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ঋণদান এবং অন্যান্য ব্যয়ের জন্য দিতে হবে চার হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ০.৮৪ শতাংশ।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ প্রস্তাবিত ব্যয় এক লাখ ৫৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭.৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সম্পর্কিত খাত) জন্য বরাদ্দ হবে এক লাখ ৪০ হাজার ২২২ কোটি টাকা।

‘ভৌত অবকাঠামো খাতের জন্য এক লাখ ৬৭ হাজার ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৯.৪০ শতাংশ। এর মধ্যে সামগ্রিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে ৬৯ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা, সামগ্রিক যোগাযোগের জন্য ৬১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা এবং বিদ্যুত খাতে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে,’ বলেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সাধারণ পরিষেবাগুলোর জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৪.৬৯ শতাংশ। এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্প, বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি ও ইক্যুইটি বিনিয়োগ বাবদ ৩৬ হাজার ৬১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৬.৪৫ শতাংশ।

ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত অর্থনেতিক ভিত রচনার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি তার বাজেট উত্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার সংসদে বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।

পাশাপাশি দেশের মানুষের অন্ন বস্ত্র যোগানের জন্য দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল রাখা। এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন, তাদের বিশ্বাস ও মনোবলের জায়গাটি অটুট রাখতে। কারণ তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন জীবন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, থেমে থাকার জন্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় রচিত এই বাজেটের হাত ধরেই আমরা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে পূর্বের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবষ্যতের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক ভিত রচনা করবো।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আইএমএফ ঘোষণা করেছে আগামী বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৯.৫ শতাংশ। যে অমানিশার অন্ধকার আমদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। ইতিহাস সাক্ষী, বাঙ্গালী জাতি শৌর্যবীর্যের এক মূর্ত প্রতীক। জাতীয় জীবনে কালক্রমে যেসকল সংকট ও দুর্যোগ এসেছে, বাঙালি জাতি সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয় অর্জন করেছি। তেমনি একইভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সবাই এক পরিবার হয়ে, একে অপরে সাহায্যে করোনাভাইরাস মোকাবিলা যুদ্ধেও আমরা জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ। এই ক্রান্তিকালে বিভ্রান্ত, ভীত বা আতংকিত না হয়ে আমাদের ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।’

২০২০ সালটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু চলতি অর্থবছরেই পড়েছে জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী। সেহেতু এ বছরটি জাতির জন্য বিশেষ একটি বছর। আমরা সবাই পুরোপুরি আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম এ বছর আমরা আমাদের অর্থনীতিতে দেশের সেরা প্রবৃদ্ধিটি জাতিকে উপহার দিবো। এক্ষেত্রে আমাদের ইন্সিত লক্ষমাত্রাটি ছিল শতকরা ৮.২ ভাগ থেকে ৮.৩ ভাগ। আমরা শুরুও করেছিলাম সুন্দর আশাদীপ্তভাবে অসাধারণ গতিতে। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাস পর্যন্ত যখনো আমরা করোনায় বেশী মাত্রায় আক্রান্ত হয়নি, আমরা অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। পৃথিবীর প্রখ্যাত সকল থিংকট্যাংক ও গণমাধ্যমসমূহ আমাদের প্রশংসায় ছিল পঞ্চমুখ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বছরের প্রথম ৮ মাসের হিসাবে আমাদের পৃবৃদ্ধির হিসাব কষেছিলো ৭.৮ ভাগ। কিন্তু দুঃখের বিষয় করোনার প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশকে সম্পূর্ণ ওলটপালট করে দিয়েছে।