ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জে এক বিদ্যালয়ে ৩-প্রধান শিক্ষক। দপ্তর নিয়ে টানাটানি। শিক্ষার মান নিম্নগামী। দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, নতুন দুলাল ভরট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সুন্দরগঞ্জ,গাইবান্ধায় ২০১৬ সালে তত্কালীন প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক কে বিভিন্ন জাল জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করে জাহিদুল ইসলাম কে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ আলোকে সিনিয়র শিক্ষক আশরাফ আলী কে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০২১ সালে মোজাম্মেল হক অবসরে গেলে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে ঘটনাটি মোড় নেয় অন্য দিকে।
সহকারী শিক্ষক জাহিনুর বেগম উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ও যোগদানের কাগজ পত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
ইতোমধ্যে জাহিনুর বেগম’র এনটিআরসিএ এর সনদ এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। যাহা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন প্রতিপক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ১১/০৩/২০২১ ইং তারিখে, ০৫.৫৫.৩২৯১.০১১.০২.০০৩.২০-২০৮ নং স্মারক এর আদেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুন্দরগঞ্জ,গাইবান্ধা কে দায়িত্ব অর্পণ করেন উক্ত বিষয় টি তদন্তের জন্য।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষয় টি তদন্ত করে ০৬-০৯-২০২১ ইং তারিখে, ৩৭.১০৩২৯১.০০০.০৮.০০০.২০-১২৮ নং স্মারক এর এক তদন্ত প্রতিবেদন দেন, প্রতিবেদনে জাহিনুর বেগম এর স্বপক্ষে ২০০৩ সালে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সত্যতা পাওয়া যায়। ২০১০ সালে জাহিনুর বেগমের নিয়োগ হয়েছে এর পক্ষে কোন কাগজ পত্র দাখিল করতে পারে নি বাদি-পক্ষ। ফলে এনটিআরসিএ এর সনদ এর আওতায় জাহিনুর বেগম এর নিয়োগ নেই। কারণ এনটিআরসিএ এর প্রচলন ঘটে ২০০৫ সালে।
কম্পিউটার শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের নিয়োগের তারিখ ০৩-০১-২০০৪ ইং থাকলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুঃ মাহমুদ হোসেন মন্ডল স্বাক্ষরিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাহিদুল ইসলামের নিয়োগের তারিখ ২২-০২-২০০৩ ইং ও যোগদানের তারিখ ০৫-০১-২০০৫/০৫-০১-২০০৪ ইং, যাতে দেখা যায়, একই ব্যক্তি ২০০৪ ও ২০০৫ সালে যোগদান করেছে, যা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।
কম্পিউটার শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে ই উক্ত বিদ্যালয়ে কোন কম্পিউটার নেই। কিভাবে তিনি সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করেন ? এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আশরাফ আলী ২০-০১-১৯৯৬ ইং তারিখে মাধ্যমিক স্তরের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও যোগদান করে ০১-০৫-২০০২ ইং তারিখে এমপিওভুক্ত হন অথচ বিদ্যালয় টি মাধ্যমিক স্তরে অনুমোদন প্রাপ্ত হয় ০১-০৫-২০০৪ ইং সালে। এ দিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক আশরাফ আলী বিদ্যালয় টি মাধ্যমিক স্তরে অনুমোদনের পূর্বে-ই দুই বছর সরকারি অংশের বেতন ভাতা ভোগ করেছেন যা ১৬-১০-২০০৬ ইং তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে জটিলতা ও বিদ্যালয় সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাহিনুর বেগম এর নিয়োগ ও যোগদান ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে,তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় নি, ২০১৫ সালে জাহিনুর বেগম সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, বিধি মোতাবেক জাহিনুর বেগম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদের দাবিদার।