খোলাবাজার অনলাইন ডেক্সঃ রংপুরের তারাগঞ্জ ওয়াকফ্ এস্টেট কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল শ্রেণির ১ম বর্ষের পরীক্ষার্থী লিওনের এডমিট কার্ড প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কর্তৃক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে মানুসিক চাপ ও সালাউদ্দিন নামের এক অভিভাবককে গালমন্দসহ বেঁধে রেখে শায়েস্তা করার হুমকীর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ২০২৫ইং দুপুর ২টায় অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিওন ও অভিভাবক সালাউদ্দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি শালিশি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্য মতে, তারাগঞ্জ ওয়াকফ্ এস্টেট কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল শ্রেণির ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান। উক্ত প্রতিষ্ঠানেই পরীক্ষা কেন্দ্র, পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত (১৪ জানুয়ারি) ২০২৫ইং। প্রতিষ্ঠানটির ফাজিল শ্রেণির ৩টি বর্ষে মোট পরীক্ষার্থী ১২৩ জন। নির্ধারিত সকল পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এডমিট বাবদ বাধ্যতামুলক ৭০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্র ফি ৪০০/- নির্ধারিত থাকলেও এডমিট কার্ডের বরাত দিয়ে বারতি ৩০০/- টাকা করে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ফাজিল শ্রেণির প্রথম বর্ষের পরীক্ষর্থী মো. লিওন ইসলামের সাথেই ঘটে আরেক অমানবিক ঘটনা। লিওনের ফরম পূরন বাবদ ৫০০/- টাকা ও এডমিট কার্ডের ৭০০/- সহ মোট ১২০০/- টাকা দাবি প্রতিষ্ঠানের।
অসচ্ছল পরীক্ষার্থী লিওন ইসলাম প্রতিবেশি চাচা সালাউদ্দিনের কাছ থেকে নেওয়া ৩০০/- ও তার কাছে থাকা ১০০/- টাকা সহ মোট ৪০০/- টাকা নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে টাকা জমা দিলেও পরীক্ষার এডমিট কার্ড পরীক্ষার্থীকে না দিয়ে, রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে নেওয়ার মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী লিওনের দুইটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এডমিট কার্ডটি পরীক্ষার্থীর কাছে যেন জাদুর চেরাগ!
জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিওন ইসলাম অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল। বিভিন্ন সময় নিকট প্রতিবেশি মো. ছালাউদ্দিন সাধ্যমত লিওনের পড়ালেখার খরচ সহায়তা করে থাকেন। প্রথম পরীক্ষার দিন লিওনের প্রতিবেশি সালাউদ্দিন এডমিট সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে গেলে অধ্যক্ষ ড. আব্দুস সালাম জনসম্মুখে তাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বেধে রাখার হুমকি দেন। এছাড়াও সালাউদ্দিনের সাংগঠনিক “রুকনিয়ত” পদ খেয়ে ফেলারও হুমকি দেন। মো. সালাউদ্দিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সৈয়দপুর উপজেলা শাখার যুব বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
এঘটনাকে কেন্দ্র করে বসা বৈঠকে, অধ্যক্ষের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিওন ইসলাম ও জামায়াতে রোকন সালাউদ্দিনের অভিযোগের সত্যতা স্পষ্ট হয়েছে। অধ্যক্ষের দাবি অনুযায়ী ভুক্তভোগীদ্বয়(শিক্ষার্থী লিওন ইসলাম ও জামায়াতে রোকন সালাউদ্দিন) তাঁর পূর্বপ্রতিবেশি হওয়ায় তিনি যেকোন অবস্থানে তাঁকে চর/থাপ্পর দিতে পারেন। বৈঠকে ভুক্তভোগী অধ্যক্ষের এমন আচরনের তীব্র প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেন। এসময় অধ্যক্ষের ডাকে অধ্যক্ষ পন্থী কিছু শিক্ষক আলোচনা কক্ষে প্রবেশ করে এবং উচ্চ বাচ্চ্য ভাষায় ভুক্তভোগীকে কোণঠাসা করে পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করে।
পরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সৈয়দপুর উপজেলার সেক্রেটারী মো. মাজহারুল ইসলাম, তারাগঞ্জ উপজেলা শাখার আমীর মো. আলমঙ্গীর হোসেন, জামায়াত নেতা এ্যাড. কাজী ছামছুল হুদা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকগণের অনুরোধে কান্নারত ভুক্তভোগী জামায়াতের রোকন সালাউদ্দিন, দলীয় পরিবেশগত সমঝোতা সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হলেও পরে বাইরে এসে অধ্যক্ষের এমন অমানবিক ও আক্রমনাত্বক অসাদাচরনের বিচার দাবি করে সাংবাদিকদের কাছে একটি ভিডিও বক্তব্য দেন।
এছাড়াও ড. আব্দুস সালাম বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় কর্মী বলে নিজেকে স্বীকৃতি দিয়ে দালিলিক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষের পদ অর্জন করেছেন মর্মেও অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি অর্থনৈতিক ও দাপ্তরিক দুর্নীতিমুক্ত করতে বিগত ও বর্তমান সময়ের আয়/ব্যয় এবং ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষাৎকারে মাধ্যমে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা জরুরী মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভুক্তভোগী।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাজিল ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ সংক্রান্ত দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ১ম ও ২য় বর্ষের জন্য ৯০৫/- এবং ৩য় বর্ষের জন্য ২১০৫/- টাকা এবং কেন্দ্র ফি/এডমিট কার্ড বাবদ ৪০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও অধ্যক্ষ ড. এ,এস,এম আবদুস ছালাম নোটিশের মাধ্যমে ১ম ও ২য় বর্ষে ৩১০০+৭০০=৩৮০০/- এবং ৩য় বর্ষে ৪৫০০+৭০০=৫২০০/- টাকা করে আদায় করে আসিতেছেন। এছাড়াও তিনি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আদায় নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আদায়কৃত অর্থ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা না করে নিজের খেয়াল খুশি মত ব্যবহার করেন। যাহা গভর্নিং বডির কোনো অনুমোদন নেই।
এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা. রেহেনা ইয়াসমিন বলেন, পরীক্ষার এডমিট কার্ড একজন পরীক্ষার্থীর পরিচয় ও অধিকার বহন করে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তা আটকে রাখার নিয়ম নেই, এডমিট কার্ড পরীক্ষার্থীর কাছে থাকবে। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, আমি আগে থেকে অবগতও না। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরীক্ষার্থীর এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিন্নাতুল ইসলাম বলেন, ফরম পূরন যখন হয়েছে, তখন এডমিট কার্ড একান্তই পরীক্ষার্থীর প্রাপ্য অধিকার, যা পরীক্ষা কেন্দ্রে তার পরিচয় বহন করে। সামান্য টাকার জন্য একজন পরীক্ষার্থীর সাথে এমন আচরন ও অব্যবস্থাপনা মোটেও ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের এডহক কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাবিবুল হাসান রুমিকে মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দাপ্তরিক অবহেলার ফলে প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে উঠেছে অমানবিক ও স্বেচ্ছাচারী। গত ২৭ অক্টোবার ২০২৪, দৈনিক কালবেলায় “এবতেদায়ি কার্যক্রম বন্ধ রেখে কিন্ডারগার্টেন চালু” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও, পরে অনেকবার যোগাযোগ করেও তিনি কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করেননি। ভিন্ন কৌশলে কিন্ডারগার্টেন কার্যক্রম এখনো চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়ম ও দাপ্তরিক শৃঙ্খলাহীনতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়) অনেক আগে থেকেই একাধিকবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বিভিন্ন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অবগত থাকলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক তদন্ত সাপেক্ষ তারাগঞ্জ ওয়াকফ্ এস্টেট কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থনৈতিক দর্নীতি দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি করেন স্থানীয় সচেতন সূধীজন।