Thu. Oct 16th, 2025
Advertisements


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি যাদুকাটা নদীর ইজারা বহির্ভূত এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি)। তবে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সুনামগঞ্জের লাউরগড় একটি অত্যন্ত ¯পর্শকাতর এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে ৫৬টি চোরাচালানের রুট রয়েছে, যা আমরা নিয়মিতভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, মাদক যেন না আসে এবং সীমান্ত হত্যা যেন না হয় সেটা বিজিবি’র মূল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে বিজিবি দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকলে সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়বে। ফলশ্রুতিতে অস্ত্র, মাদক চোরাচালানসহ সীমান্ত হত্যা বেড়ে যেতে পারে যা দেশের জন্য অনেক বিপদজনক। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে বিজিবি এককভাবে ২৪ ঘন্টা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে থাকে। সাধারণত প্রতিটি বিওপি গড়ে ৫-৭ কি. মি. সীমান্তবর্তী এলাকা প্রহরা দিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে যাদুকাটা নদীতে ইজারা বর্হিভূত এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ বালু কিছু কুচক্রি মহল এবং অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, এতে করে ব্যাপকভাবে নদীর পাড় ভাঙনের কারণে ভবিষ্যতে লাউরগড় বিওপিসহ নিকটবর্তী গ্রামের অনেক বাসিন্দা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত সুরক্ষা, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান প্রতিরোধ বিজিবি’র অভিযান ব্যার্থ হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিজিবি যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল সমস্যাটি হচ্ছে ইজারার সীমানা নির্ধারণের পর বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং কুচক্রি মহল দখলকৃত খাস জমি হতে বালু উত্তোলন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং একযোগে ১৫শ থেকে দুই হাজার নৌকা নিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক একসাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে। বিশেষ করে গভীর রাতে ইজারা বহির্ভূত এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেলে বিজিবি ব্যতীত অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই এলাকায় থাকে না। বিজিবি এককভাবে প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে পাড় কেটে বালু উত্তোলন ঠেকাতে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি লাউরগড় বিওপিতে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ও নৌযান মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেটি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের নৌকা ও শ্রমিকের তুলনায় অনেক কম। এ ব্যাপারটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অতএব, সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। দেশের প্রাকৃতিক স¤পদ এবং পর্যটন ¯পট শিমুলবাগান, বারেকেরটিলা ও যাদুকাটা নদী রক্ষার্থে প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ এবং গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিজিবি’র পক্ষ হতে জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং সেখনে কিছু প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি কেন না এটা বিজিবি’র একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। প্রস্তাবনা সমূহ হচ্ছে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি স্থায়ী পোষ্ট স্থাপন, নিয়মিতভাবে টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা, মজবুত খুঁটি ও পতাকার মাধ্যমে ইজারাকৃত এলাকাটি ¯পষ্ট করা এবং নৌ-পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল তৎপরতা বজায় রাখা। এছাড়াও অনিয়ম সমূহের সাথে ইজারাদারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে ইজারা বাতিল করা। প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের আলোচিত নদী (বালু মহাল) যাদুকাটায় বিগত সরকারের আমলেও হয়েছে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ। আদালত সনাতনি পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের কথা বললেও ড্রেজার এবং সেইভ মেশিনের তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে নদীর দুই পাড়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও এমন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয় নি। সম্প্রতি পাড় কটাসহ পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার ও সেইভ মেশিন বন্ধের শর্তে মামলায় জড়িত এই দুই বালু মহাল ইজারা দেওয়ার পক্ষে মত দেন আদালত। যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ বালু মহাল ভ্যাট ট্যাক্সসহ একশ কোটি ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে এবার। আগেও এখানে ইজারাদারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি, জেলা নেতারাসহ প্রভাবশালীরা যুক্ত ছিলেন। এখন বিএনপির প্রভাবশালী নেতারাসহ এলাকার প্রভাবশালীরা ইজারাদারের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশিদার।