রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ট্যাবলেট হয়ে ঢুকতে না পারলেও ইয়াবা ঢুকছে এখন তরল হয়ে। মিয়ানমারসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে ঢুকছে এটি। দেশি-বিদেশি মাদক পাচারকারীরা ইয়াবার কেমিকেল দেশে এনে ট্যাবলেট তৈরি করে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত করছে।
এরই মধ্যে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ইয়াবা তৈরির কেমিকেল আটক করছে। একই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে হাজার হাজার ইয়াবার চালান আটক করছে। ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাঁজা, দেশি-বিদেশি মদ, কোকেন ও আফিমকে ছাড়িয়ে মাদকের বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে গোলাপি রংয়ের এই ট্যাবলেট।
বিজিবির সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা বলেন, বাহিনীর বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও ইউনিটের সদস্যরা ইয়াবা ট্যাবলেট ও ইয়াবার উপকরণ কেমিকেল আটক করেছে। গত আগস্ট মাসেই কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮২ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা তৈরির উপকরণ আটক করেছে বিজিবি।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের উপপরিচালক মেজর মাকসুদুল আলম জানান, সারাদেশেই এখন ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও কোম্পানি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিগত আট মাসে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের পাশাপাশি ২০ লক্ষাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্তেই রয়েছে এক ডজনের বেশি মাদক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট কখনও ট্যাবলেট আবার কখনও নানা কৌশলে ইয়াবা তৈরির কেমিকেল মেটাফিটামিন ও সিউডোফিড্রিন দেশে নিয়ে আসে। পরে সীমান্ত এলাকা ছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ট্যাবলেট তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আলী আকবর নামের ইয়াবা তৈরির এক কারিগরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পাস করেন। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে আকবর জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে øাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কেমিস্ট হিসেবে চাকরি করতেন। পরে বিভিন্ন কাঁচামাল ও কেমিকেল দিয়ে ইয়াবা তৈরি করে বাজারজাত করতেন।
বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি এলাকায় মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত এসে মিশেছে। এই এলাকাটি অনেকটা ‘নো ম্যানস ল্যান্ডের’ মতো। এই স্থানটিকেই ইয়াবা তৈরি ও পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করে মাদক পাচারকারীরা। এসব ইয়াবা কখনও ভারতের মিজোরাম হয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। এছাড়া মিয়ানমার সীমান্তের অনেক অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা দিয়েও অবাধে ইয়াবা ও এর উপকরণ দেশে ঢুকছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ভেতরে ইয়াবার প্রধান রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার ইয়াবার চালান আসছে রাজধানীতে। তৈরি হচ্ছে রাজধানীতেও। যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ, ওয়ারী, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ও পুরান ঢাকার এলাকা থেকে এসব ইয়াবার চালান হাতবদল হচ্ছে। যাত্রীবাহী বাস, কার, মাইক্রো ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাকেও আসছে ইয়াবা। নানা কৌশলে ইয়াবা দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়ও চষে বেড়াচ্ছে।
বিজিবির গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সীমান্ত দিয়েই প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি পিস ইয়াবা ট্যাবলেট রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সাগর ও নদীপথ ছাড়াও প্রায় ৫৪ কিলোমিটার উš§ুক্ত মিয়ানমার সীমান্তের অন্তত ৪০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ও এর উপকরণ ঢুকছে বাংলাদেশে। এ সময়ে মাদক পাচারের ঘটনায় র্যাবের হাতেই সারাদেশে আটক হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তি।