Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকায় পা দিয়েই হাঁকডাক শুরু আফগানিস্তানের। সেটা শুনে বাংলাদেশ ভয় পেল নাকি সতর্ক হলো, সেটা অপ্রকাশিত। তা প্রকাশ্য রূপ নেবে আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টা থেকে দুই ফুটবল শক্তির লড়াইয়ে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান অন্য কোনো দেশকে হুঙ্কার দিচ্ছে, এটা বিস্ময় জাগাতে পারে। সমরে-আগ্রাসনে এটা বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব, এখনো বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় আফগানরা। সোভিয়েত যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ এবং সর্বশেষ তালেবানি যুদ্ধের ১৮ বছরে তাদের শক্তি-ঐতিহ্য সবই ক্ষয়ে গেছে। পুরোপুরি বিপদমুক্ত জনপদ না হলেও এখন শুরু হয়েছে নানামুখী সংস্কার। জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের সহযোগিতায় চলছে ফুটবলীয় সংস্কার। সেটা এখনো ১৯৪১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইরানের সঙ্গে ড্রয়ের মান ছুঁতে না পারলেও ‘বহুজাতিক’ আফগান ফুটবল দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। দেশে না খেললেও অভিবাসী হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খেলা ফুটবলারদের হাতেই এখন আফগান ফুটবলের ঝাণ্ডা। সেটা যে এই উপমহাদেশের ফুটবল মানকে ছাপিয়ে গেছে তার বড় স্মারক হয়ে আছে ২০১৩ সালে ভারতকে হারিয়ে আফগানিস্তানের সাফ শিরোপা জয়। সুতরাং ফুটবলীয় শক্তিতে এগিয়ে থাকা এই দলের হুঙ্কার দেওয়ার ক্ষমতা হয়েছে। তাই গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে ১-০ গোলে হার হজম করতে পারছে না বলেই আফগান অধিনায়ক জালাল উদ্দিনের কণ্ঠে ঝাঁঝ, ‘এশিয়ান গেমসের ম্যাচে আমরা ৭০ শতাংশ বল পজেশনের বিপরীতে বাংলাদেশ রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছিল। শেষ পর্যন্ত এক গোলে জিতেছে। এবারও রক্ষণাত্মক খেললে কিভাবে ডিফেন্স ভেঙে গোল বের করতে হয় সেটা আমরা জানি।’ স্পষ্ট সেই হারের আগুন এখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে আফগান যুবকের বুকে, তাই বাংলাদেশের মাঠে এসেও তারা প্রতিশোধের নেশায় মত্ত।

বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ম্যাচের ইতিহাস টানলেও কখনো আফগান ফুটবলের শৌর্যের ছবি ফুটে ওঠে না। সৌভাগ্য যে ক্ষয়ে যাওয়া অতীতের পরেই রচিত হয়েছে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাস। যেখানে চারটি ম্যাচের দুটি জিতেছে বাংলাদেশ। একটি গত বছর এশিয়ান গেমসে, অন্যটি ২০১০ সালে ঢাকায় এসএ গেমসে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ইতিহাস এভাবে লাল-সবুজের পাশে প্রেরণা হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের ডাচ কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফ সতর্ক, ‘এশিয়ান গেমসে তাদের খেলায় টেকনিক-ট্যাকটিকস সবই দেখেছি। তারা খুব ভালো ফুটবল খেলে। তবে এবারের দলের আশি ভাগ নতুন খেলোয়াড়। জার্মান কোচিং স্টাফ কাজ করছে দল নিয়ে। বলতে পারি একটা ভালো দলের বিপক্ষেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে আমাদের পরীক্ষা হবে।’ তিনি গত ৩০ মের প্রীতি ম্যাচের প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুরের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন আফগানিস্তানকে। সিঙ্গাপুরের কাছে হারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভালো ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সুযোগ নষ্টের মাসুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এখন সিঙ্গাপুরের চেয়ে শক্তিশালী আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কিভাবে নিজেদের মেলে ধরে, সেটাই দেখতে চান ক্রুইফ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে একাদশেও পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডি ক্রুইফ।

তবে আফগান হুঙ্কারে কাবু নন বাংলাদেশের ডাচ কোচ। এশিয়ান গেমসের ম্যাচের স্মৃতি টেনে তিনি বলেছেন, ‘ওই ম্যাচের ১০-১৫ মিনিট পর আমরা খুব বিস্মিত হয়েছিলাম তাদের খেলার মান দেখে। বুঝতে পেরেছিলাম, আমরা যেভাবে খেলতে চাই, এদের বিপক্ষে তেমনটা খেলা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে পিছু হটেছিলাম। তবে আশা করি, কালকের ম্যাচটি ভিন্ন হবে, বল পজেশনে আমরা এগিয়ে থাকার খেলা খেলব।’ ক্রুইফের অধীনে বাংলাদেশ সাধারণত ৪-৩-৩ স্টাইলে অ্যাটাকিং ফুটবল খেলে। বিপদ দেখে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ডিফেন্সিভ খেলে কাউন্টার অ্যাটাকে ম্যাচ বের করে নিয়েছিলেন। এই ম্যাচে সেই কাউন্টার অ্যাটাক-নির্ভর ফুটবল খেলবে নাকি বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে বিল্ডআপ ফুটবলের চেষ্টা করবে বাংলাদেশ, সেটি আগাম জানাননি কোচ।

এদিকে এটাই আগামী ১১ জুন কিরগিজস্তান ও ১৬ তাজিকিস্তানের বিপক্ষে হোম ম্যাচের শেষ ‘ড্রেস রিহার্সেল’। তাই নিজেদের মাঠে ম্যাচ জেতার ট্যাকটিকসের প্রয়োগটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা কতটা সফলভাবে করতে পারছে কিংবা না পারলে কোথায় ঘাটতি, সেটাও শেষবারের মতো জানা হয়ে যাবে।