খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
রাজধানীতে সুপেয় পানির নামে ময়লাযুক্ত ও দূষিত পানি খাওয়ানো হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির নামে জারে ভরে ওয়াসার সাপ্লাইয়ের পানি বাজারজাত করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট ও বিপণীবিতানে নোংরা জারভর্তি এই পানি কিনে পান করছে রাজধানীবাসী। জানা যায়, অন্তত একশ প্রতারকচক্র ওয়াসার পানি সরাসরি জারে ভরে এগুলো বিশুদ্ধ পানি হিসেবে বিক্রি করছে। আর গরম বেড়ে যাওয়ায় এই চক্র এখন আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো রসায়নবিদ। মাত্র ৫০০ টাকার পাঁচ হাজার লিটার ওয়াসার পানি প্রতারকচক্র বিক্রি করছে অন্তত ছয় হাজার টাকায়। বিএসটিআই’র অনুমোদনপ্রাপ্ত পানির কারখানার সংখ্যা ৩২৫টি হলেও বাস্তবে মোট কারখানা রয়েছে প্রায় ৫০০টিরও বেশি। বিভিন্ন সময়ে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ পানি উৎপাদন কারখানা সিলগালা করছে মোবাইল কোর্ট। তাতেও থেমে নেই চক্রটি। বিশুদ্ধ পানির নামে জারে ভরে তা রাজধানীর বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট ও বিপণীবিতানে বিক্রি করছে ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশুদ্ধ পানি মনে করে রাজধানীবাসী ওই নোংরা পানি খাচ্ছে। এদিকে অবৈধ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বৈধ অনেক প্রতিষ্ঠানও এমন কাজের সাথে জড়িত রয়েছে। সুপেয় পানির উৎপাদন ও বাজারজাত করার আগে বাধ্যতামূলক ৩০টি পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসটিআই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়া অনেক কারখানাতেও বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, যে পরিবেশে পানি পরিশোধন ও বাজারজাত করা হয়, তা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অধিকাংশ কারখানারই পরীক্ষাগার ও পরীক্ষার উপকরণ নেই। নিম্নমানের পানি সরবরাহ করার কারণে সম্প্রতি অনেক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন পরিমাণে জরিমানা করা হয়েছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স জব্দ করা হয়েছে। পানি সরবরাহকারী ঢাকার অনেক প্রতিষ্ঠানেরই বিএসটিআই’র দেয়া লাইসেন্স নেই বলে জানা গেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সরবরাহের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিএসটিআই সূত্রে জানা যায়, পানিতে অল্প ও ক্ষারের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৬ দশমিক ৪ থেকে ৭ দশমিক ৪। কিন্তু ঢাকায় সরবরাহকৃত বেশিরভাগ জারের পানিতে ক্ষারের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে মোবাইল কোর্টের পরীক্ষায়। পানি পরিশোধনের যন্ত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় ক্ষারের পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষের সঙ্গে এসব প্রতারণা করে যাচ্ছে এখন থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা গেলে এটা ভবিষ্যতে মানুষের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিবে। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে হলেও পানির গুণগত মান ঠিক রাখা এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারি জানান, তিনি বাহিরে তদারকি করতে গেছেন। অন্যদিকে মিটিংয়ে থাকায় ঢাকা ওয়াসার ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিনের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যারা পানি নিয়ে এভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে, জীবন বিপন্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআইকে যথাযথ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি।