খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০১৫, ফকিরহাট, বাগেরহাট : বাগেরহাটের ফকিরহাটে চিংড়ি চাষে কৃষি জমি থেকে পরিবেশ বান্ধব শামুক নিধন চলছে অপ্রতিরোদ্ধ ভাবে। নির্বিচারে শামুক নিধন করায় পরিবেশের ভারসাম্য চরম ভাবে নষ্ট হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ঠ হয়ে বিষাক্ত পোকা মাকড়ের আক্রমন চরম ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে চাষি।
সরেজমিনে পরিদর্শন কালে জানা যায়, চিংড়ি ঘেরে বাজারে তৈরি খাবারের বিকল্প হিসাবে চাষিদের কাছে শামুকের ভিতরের নরম অংশ অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নিম্ন আয়ের দরিদ্র জনগোষ্টিকে উৎসাহিত করে খালবিল নদী-নালাসহ কৃষি জমি থেকে সংগ্রহ করছে শামুক। এক শত পিচ শামুক ক্রয় করছে ৩৫/৪০টাকা দরে। এগুলি বস্তা চুক্তিতে ৬০/৭০টাকা করে নরম অংশ বেরকরতে পারিশ্রমিক দিচ্ছে। এ উপজেলা সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে নির্বিচারে শামুক সংগ্রহ করিয়ে ঘের মালিকরা তা বস্তায় ভরে পৌঁেছ দিচ্ছে শামুক ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে। উপজেলার মুলঘর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন কালে দেখা যায় স্কুলে না গিয়ে বা অবসর সময়ে ঝুকিপুর্ণ জলাশয় থেকে ছাত্র ছাত্রিরা সংগ্রহ করছে শামুক। ৫ম শ্রেনীর ছাত্র দুর্যয় মালাকার(৯) ও ৯ম শ্রেনির ছাত্রী জুই মন্ডল(১৪) বলেন, পড়া লেখার খরচ যোগাতে স্কুলের পাশাপাশি মায়ের সাথে বাড়তি আয়ের আশায় শামুক সংগ্রহ ও তা ভাঙ্গার কাজ করছে। ভানুমতি,সারতি মালাকার, বিথিকা রানী,কল্পনা রানী, প্রশান্ত রায় সহ এ উপজেলার প্রায় শতাধিক নারী পুরুস ও মহিলা এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তারা বলেন, এ মৌশুমে অন্য কোন কাজ না থাকায় পেটের তাগিদে এবং ছেলে মেয়ের লেকাপাড়ার খরচ জোগাতে তারা এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি কোন সাহায্য ইউপি চেয়ারম্যান না দেওয়ায় তাদের দূর্ভোগ চরমে উঠেছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। শামুক নিধন প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, শামুক ফসল বিনষ্টকারী বিভিন্ন পোকা ও ডিম খেয়ে কৃষি কাজে ব্যাপক সহযোগিতা করে থাকে। নির্বিচারে শামুক নিধন করা হলে কৃষি খাতে অপুরনিয় ক্ষতি হবে। তিনি আরো বলেন, কৃষি জমি থেকে শামুক নিধন না করে তা চাষ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
উপজেলা মৎস্য অফিসার ইখতেখারুল আলম বলেন, শামুক বিভিন্ন ধরনের পরজিবি রোগ জীবানু বহন করে। তাই এগুলি মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার করলে মৎস্য ঘেরে নানা রোগের আক্রমনে মড়ক লাগতে পারে। তিনি শামুক ব্যবহারের বিকল্প হিসাবে ধানের কুড়া, শরিষার খৈল ও ভাঙ্গা চাউল সিদ্ধ করে তা মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেন। এতে করে মৎস্য চাষিরা তুলনা মুলক ভাবে অধিক লাভবান হবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মুলঘর বানিয়াখালী এলাকার সফল মাছ চাষি মমতা বাগচি ও শিপরা বাগচি চিংড়ি চাষিদের উদ্দেশ্যে বলেন, অর্থ বাচাতে গিয়ে মৎস্য চাষে অনর্থ ডেকে আনবেন না। কৃষি জমি থেকে শামুক নিধন করে কৃষকের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনী মৎস্য ঘেরে লাভের আশায় তা প্রয়োগ করে মাছের ঘেরে ভাইরাস সহ নানা রোগ ডেকে আনা হয়। তিনি তার ঘেরে মাছের খাবার হিসাবে খৈল, চাউলের কুড়া, গমের ভুষি ও মৎস্য বিভাগের পরামর্শে হাতে তৈরি খারার ব্যবহার করে লভবান হওয়ার জন্য শামুক নিধন বন্ধ করার আহবান জানান।