Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

11খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৫: কর ফাঁকি ও মুদ্রা পাচার রোধে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর)। এ জন্য মাঠপর্যায়ে কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে ঝুঁকি নির্ধারণের মাধ্যমে এ সব কোম্পানিকে বিশেষ অডিট করা হবে।
এনবি আর সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যমে মুনাফা স্থানান্তরের নামে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার করে থাকে। সাধারণত যে সব দেশে করহার বেশি সে সব দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে নানা কৌশলে অর্থ করহার কম এমন দেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়। এতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে, কিন্তু কর কম দিতে হয়। এটা এক ধরনের অর্থ পাচার। এটা রোধ করতেই কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা সংযোজন করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য রিটার্ন দাখিলের সময় বাধ্যতামূলক করা হয়।
আয়কর অধ্যাদেশের ১০৭ইই ধারায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিকে রিটার্ন দাখিলের সময় লেনদেনের বিবরণী জমা দিতে হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বিলে রিটার্ন দাখিলের সময় আন্তর্জাতিক লেনদেনের বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ কোম্পানিকে জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়।
১০৭এইচএইচ ধারা অনুযায়ী, যে সব কোম্পানি রিটার্নে আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য দিতে ব্যর্থ হবে তাদের মোট লেনদেনের অর্থের ২ শতাংশ জরিমানা আরোপ করতে পারবেন উপ-কর কমিশনার।
অর্থাৎ কোনো কোম্পানি যদি বছরে ১ লাখ ডলার আন্তর্জাতিক লেনদেন করে থাকে তবে এর সপক্ষে হিসাব বিবরণী জমা দিতে না পারলে ২০ হাজার ডলার জরিমানা করতে পারবেন উপ-কর কমিশনার।
এনবি আরের মতে, বিদেশে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কারণে অন্তত ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক লেনদেন করে থাকে। তবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) মতে, ১৬০টি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিদেশে তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেন করে।
মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো গবেষণা-উন্নয়ন, সফটওয়্যার, আইসিটি, টেকনিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কমিশন, লজিসটিকস ফি পরিশোধের জন্য মূল্য স্থানান্তর করে থাকে।
ক্রিশ্চিয়ান এইডের সর্বশেষ হিসাবে, ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকিতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। শীর্ষে অবস্থান করছে নাইজেরিয়া। পরের স্থানগুলোয় রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ২০০৫-০৭ সাল পর্যন্ত ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রাজস্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০০৫ সালে হারিয়েছে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ২০০৬ সালে ৭ কোটি ৮০ লাখ ও ২০০৭ সালে ২১ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও উন্নয়ন নির্দেশনাবলী ২০০৮-১২ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট রাজস্ব আয়ের ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আয়কর অণুবিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো রিটার্নে আন্তর্জাতিক লেনদেনের হিসাব যথাযথভাবে দাখিল করছে। এরপর ঝুঁকি নির্ধারণের মাধ্যমে নিরীক্ষা কয়েকটি কোম্পানিকে অডিট করা হবে। আগামী বছর থেকে অডিট কার্যক্রম শুরু হবে।