
জানা গেছে, একাধিক মামলার আসামি ছাড়িয়ে নিতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে হুইপ ছেলুন ও তাঁর সহযোগী জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।এ ঘটনার পর পুলিশ আক্রমণকারীদের থানা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে আক্রমণকারীরা নির্বিচারে শহরের শহীদ হাসান চত্ত্বর এলাকাসহ গাড়ি, মোটরসাইকেল, দোকানপাট ভাঙচুর করতে থাকে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ আক্রমণকারীরা পিস্তলের কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। শহরের দোকানের সামনে জ্বলা বাতিগুলো ভেঙ্গে ফেলে তারা। এসময় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।যোগাযোগ করা হলে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন জানান, তিনি বৃস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাড়িযোগে সদর থানায় যাওয়ার সময় থানার প্রধান দরজার সামনে গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পান এডভোকেট আব্দুল মালেকের মোটরসইকেলে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনসহ বেশ কিছু দলীয় নেতাকর্মী থানার দিকে আসছে। হুইপ ছেলুন মোটরসাইকেল থেকে নেমেই পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানকে গালিগালাজ করতে থাকেন ও তাকে ধাক্কা মারে। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা খুস্তার জামিল ও মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার এবং হুইপের ভাইয়ের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক ও তাদের সহযোগীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও তার ওপর (এএসপি) আক্রমণ চালায় এবং পুলিশের পিকআপ ভ্যানটি ভাঙচুর করে।পরে পুলিশ সক্রিয় হলে আক্রমণকারীদের ধাওয়া করে। ওই সময় আক্রমণকারীরা পিছিয়ে যায় এবং হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এলাকা ত্যাগ করে। তিনি আরো জানায়, ঘটনাটি পুলিশের উচ্চপর্যায় ছাড়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পৌর এলাকার সাতগাড়ী গ্রামের নতুনপাড়ার ৫ মামলার আসামি খালিদ (২২), একই এলাকার সাঈদ রাজমিস্ত্রীর ছেলে আসাদ (২০) ও শহরের মসজিদ পাড়ার আসলামের ছেলে কানা রাসেলকে (২৩) আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৫ মামলার আসামি খালিদকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে আসা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও উনার ভাই মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার এবং ভায়ের ছেলে অনিকের নেতৃত্বে যে আক্রমণটি হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা পুলিশের পিকআপ ভ্যানসহ শহরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। একজন ওয়ারেন্টের আসামিকে ছাড়াতে হুইপ কেন উত্তেজিত হয়ে থানায় এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করল তা আমরা বুঝতে পারছি না। এভাবে কি করে পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবে? যেখানে সরকারি দল মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবে, সেখানেই তারাই প্রত্যেকদিন আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। তিনি আরো জানান, পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টির কারণে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের পর বোঝা যাবে।চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, একজন আসামিকে ছাড়াতে এসে পুলিশের ওপর যে ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে জানতে, জাতীয় সংসদের হুইপ ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ফোনটি ধরেননি।