খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬: বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ার কথা ছিল, পাঁচ মাসেই তার ৭৫ শতাংশের বেশি নিয়ে ফেলেছে সরকার।
সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ধার করেই প্রয়োজনীয় খরচ মেটাচ্ছে।
সরকারের পরিকল্পনা ছিল, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটানো হবে। এর মধ্যে নভেম্বরের মধ্যেই সরকার ১১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা ধার নিয়ে ফেলেছে।
অবশ্য এ চিত্র একেবারে নতুন নয়। আগের অর্থবছরের বাজেটে সরকার যেখানে সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণ করবে ভেবেছিল, বছর শেষে তা ২৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় ঠেকে।
এদিকে সুদের হার আরেক দফা কমানো হতে পারে- এমন খবরও গত কিছুদিনে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা কমাতে গত বছরের মে মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়। এরপরও এ খাতে বিনিয়োগ কমেনি; উল্টো বেড়েছে।
“শোনা যাচ্ছে আরেক দফা কমানো হতে পারে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার। অর্থমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সে কারণে যাদের কাছে টাকা আছে তারা একটু বেশি লাভের আশায় আগেভাগেই সঞ্চয়পত্র কিনে রাখছেন।”
পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে আগে মাসে এক হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পাওয়া যেত, সুদের হার কমানোর পর এখন পাওয়া যাচ্ছে ৯১২ টাকা।
এরপরও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি খুব একটা কমেনি। বিনিয়োগের জন্য সাধারণে মানুষ এখনও ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ এ খাতকেই বেছে নিচ্ছেন।
অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে মোট ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। ২৩ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ কমানোর পর তা ৩ হাজার ৯০৭ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর কয়েক দফা ওঠানামা হলেও গত নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বি আইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, ক্রমাগত বিক্রি বাড়ায় ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় সরকার বাধ্য হয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েছে।
“কিন্তু এখনও যেহেতু ব্যাংকের আমানতের চেয়ে এর সুদ হার বেশি, সে কারণে বিক্রি কমছে না। এছাড়া পুঁজিবাজারে মন্দা যাওয়ায় সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন সবাই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে।”
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ২৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তার আগের দুই অর্থবছর যথাক্রমে ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা এবং ৭৭৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
প্রতিদিন যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় তা থেকে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট বিক্রি বলে হিসাব করা হয়।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর সরকারের কোষাগারে যেটা জমা থাকে সেখান থেকে নিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় খরচ করে।
গত ২০ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “আমাদের দেশে বিনিয়োগের বড় বাধা হচ্ছে ঋণের সুদ হার। ব্যাংকগুলো নিজেরাই সুদ হার নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু তারা সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনছে না।”
এ সময় ব্যবসায়ী শিল্পদ্যোক্তারা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর দাবি জানালে মুহিত বলেন, “ব্যাংকগুলো যদি ঋণের সুদের হার কমায় তাহলে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমানো হবে।”
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ঋণাত্মক (-)।
অর্থ্যাৎ, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে আগে যে ঋণ নিয়েছিল সেই ঋণের সুদ-আসল বাবদ ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা এই সময়ে শোধ করেছে।
“সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় ব্যাংক থেকে ধার করার প্রয়োজন পড়ছে না। উল্টো আগের দেনা শোধ করছে সরকার,” বলেন জায়েদ বখত।