খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬: কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নতুন করে আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় মামলার নিষ্পত্তি ও গ্রেপ্তারদের জামিনের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলেও এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “পুলিশ আর কাউকে গ্রেপ্তার করবে না। গ্রেপ্তাররা যাতে দ্রুত জামিন পায় সে বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করবো।
“মামলা-মকদ্দমা যাতে শেষ হয়ে যায় সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনায় ‘১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ যৌথভাবে নির্মাণ করছে এস আলম গ্রুপ ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়রা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। তাদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপ পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে।
গত ৪ এপ্রিল গণ্ডামারায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন পাল্টাপাল্টি সমাবেশ এবং সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্র ঠেকাতে ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’র ব্যানারে ১০ এপ্রিলে কাফন মিছিল ও উপজেলা প্রশাসন ঘেরাও এবং ‘উন্নয়নের পক্ষে এলাকাবাসী’র ব্যানারে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষের লোকজন পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করলে ফের বিস্ফোরণোন্মুখ হয় বাঁশখালী।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে সরকার এলাকাবাসীর ক্ষোভের কথা শোনার আশ্বাস দিলে ১৫ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করে বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধীরা। এরপর স্থানীয়দের সঙ্গে প্রশাসনের এই মতবিনিময় সভা হলো।
সভায় আন্দোলন কমিটির সভাপতি ও সংঘর্ষে নিহত মরতুজা আলী ও আনোয়ার ইসলামের ভাই বদি আহমেদ বলেন, “আমি ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই। আমার দুই ভাই মারা গেল অথচ আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হলো।”
এ ঘটনা নিয়ে বাঁশখালীর ইউএনও মো. শামসুজ্জামান ও থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “গণ্ডামারায় এক হাজার ৫০ একর জমি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক টাকায় লিজ দিতে প্রস্তাব পাঠায় ইউএনও।
“আগে থেকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেয়। আর সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মামলার আসামি করে হয়রানি করে ওসি। এসব বিষয় তদন্ত করতে হবে।”
ইউএনও ও ওসির কর্মকাণ্ড নিয়ে জেলা প্রশাসকের কথায়ও অসন্তোষ ফুটে ওঠে: “সেখানকার অবস্থা এত খারাপ সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। কারণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার ওসি বিষয়টি তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন।”
এখানে জমির মালিকরা ন্যায্য মূল্য পায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রথমে আমরা বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছি- গণ্ডামারায় জমির মালিকরা প্রকৃত মূল্য পায়নি। মাঝখান থেকে কিছু বাটপার-দালাল টাকা নিয়ে গেছে।
“ফলে আপনাদের মনে ক্ষোভ জন্মেছে। বিষয়টি এখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি।”
স্থানীয়দের সঙ্গে আগে মতবিনিময় করলে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না বলেও মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, “গণ্ডামারায় যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেটি বেসরকারি অর্থায়নে। তারা জায়গাও নিজেদের মত করে কিনেছে। সরকারের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যেহেতু সেটি একটি উন্নয়ন প্রকল্প তাই সরকার চায় সেটি হোক।”
তবে জনগণকে সন্তুষ্ট রেখেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, “আধুনিক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এ কেন্দ্রের জন্য কোনো গভীর নলকূপ করতে পারবে না। কারণ এখানে মিঠাপানির সংকট আছে সেটা আমরা জানি। প্রকল্পের জন্য সাগর থেকে পানি এনে পরিশোধন করে ব্যবহার করবে।”
প্রয়োজনের বেশি খাস জমি প্রকল্পের জন্য নেওয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক।
সভায় আন্দোলন কমিটর সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শফকত চাঁটগামী, এনামুল হক মানিক, আব্দুল মালেক, মাস্টার মফজল আহম্মদ, আব্দুর রহমান এবং সরল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।