নিজের জেলা হওয়ার বদৌলতে পুরো জেলায় চষে বেড়িনো হয়েছে। সম্ভবত প্রকৃতি পাহাড়ে এসে সবোর্চ্চ উদার হয়েছে। সাজেক ভ্যালিতে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত পাওয়ার পর থেকে এখানে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি খাগড়াছড়ির ভ্রমণ গন্তব্যগুলোতে ঘুরে বেড়ায়।
সাজেকের পাশাপাশি এক-দুদিন সময় বাড়ালে ট্রেক রুটগুলো ধরে ঘুরে আসা যায় পাহাড়ের বুনো সৌর্ন্দয্য- ঝরনার স্রোতধারায়।
এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি কিংবা রাঙামাটির (রাঙামাটিতে অবস্থান হলেও ঝরনার রুট মূলত খাগড়াছড়ি) ১০টি ঝরনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হল এখানে।
তৈদুছড়া এক ও দুই: পুরোটা পথ ট্রেকিং করতে হয়। খাগড়াছড়ির দিঘীনালার জামতলী হয়ে ঢুকলে তুলনামূলক সহজ ট্রেইল পাওয়া যায়। ট্রেইলের ধরন— ঝিরি ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ। তবে তৈদুছড়া’র ০১ থেকে তৈদুছড়া ০২ যাওয়ার পথটা বেশ ঝুকিপূর্ণ। আসা-যাওয়ায় প্রায় ছয় থেকে ঘণ্টার ট্রেকিং।
সিজুক এক ও দুই: সিজুক ঝরনার অবস্থান রাঙামাটি হলেও যাওয়ার রাস্তা মূলত খাগড়াছড়ির দিঘীনালা হয়ে। দিঘীনালা থেকে চাঁন্দের গাড়িতে নন্দরাম পর্যন্ত যেতে হবে। নন্দরাম গ্রাম থেকে পাহাড়ি ট্রেইল, বাঁশবন পেরিয়ে ঝিরি পথে সিজুক এক ও দুই যেতে হবে। তবে ভরা বর্ষায় ঝিরিতে গলা পর্যন্ত পানি হয়।মাচালং ঝরনা: খাগড়াছড়ি থেকে চাঁন্দের গাড়িতে সাজেক যাওয়ার পথে মাচালং’য়ের আট নম্বর থেকে পাহাড়ে পথে মাচালং ঝরনায় যেতে হয়। মাচালং ঝরনার উচ্চতার দিক থেকে এই বেল্টের সবোর্চ্চ ঝরনা। রাজনৈতিক গোলযোগপূর্ণ হওয়ায় এই ট্রেইলে একটু সাবধন হতে হবে। অবশ্যই স্থানীয় কাউকে সঙ্গে রাখতে হবে।
হরিণ মারা ঝরনা: এর প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় গত বছর। বাঘাইহাট পুলিশ বক্সের আগে পাহাড়ের মেঠো পথ ধরে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার ট্রেক করতে হয়। বেশিরভাগ পথই সমতল। শুধু মাত্র ঝরনায় নামার ক্ষেত্রে খাঁড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়। ট্রেকিংয়ে সময় প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা।
তোজেংমা ঝরনা: পাহাড়ের নতুন কিন্তু অত্যন্ত সুন্দর এই জলধারার বৈশিষ্ট হচ্ছে, দুটি ঝরনা একই খুমে এসে মিলেছে। তোজেংমার বেশিরভাগ ট্রেইল ঝিরির পথ। পুরোটা ট্রেইল খুবই মনোমুগ্ধকর। সবুজে মোড়ানো এমন ট্রেইল খুব কম আছে। দিঘীনালা থেকে ঝরনা ঘুরে আসতে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে।বর্ণাল ঝরনা: মাটিরাঙ্গা’র বর্ণাল ইউনিয়নে এর অবস্থান। ঝরনার পথ খুব দীর্ঘ না হলেও খুবই ঝুকিপূর্ন। ঝরনার যাওয়ার একমাত্র পথ লতা বেয়ে খাঁড়া পাহাড় বেয়ে নামা । পাহাড় ঘেরা ঝরনার বিশাল জলাধার মুগ্ধ করে।
হাজাছড়া ঝরনা: সাজেকের পথে এই ঝরনা এখন বেশ জনপ্রিয়। ঝিরি পথে সহজ ট্রেইল এত বিশাল সুন্দর ঝরনা খুব কমই আছে। রাস্তা থেকে পাঁয়ে হেঁটে ২০ মিনিটে এই ঝরনা দর্শন করা যায়।
রিছাং ঝরনা: পাহাড়ি ঝিরি থেকে বয়ে আসা রিছাং খুবই জনপ্রিয় ঝরনা। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে প্রচুর পর্যটক আসে। রিছাং ঝরনার পিচ্ছিল পাথর খণ্ডে স্লাইডটা বেশ রোমাঞ্চকর।
কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন: খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রামের সরাসরি বাসে যাতায়াত করা যায়। শ্যামলী, শান্তি, সৌদিয়া, এস.আলমসহ বিভিন্ন পরিবহন প্রতিদিন যাতায়াত করে।
তাছাড়া খাগড়াছড়িতে রাতযাপনের জন্য- হোটেল গাইরিং, ইকোছড়ি ইন, ম্যাউনন্টেইন ইন, অরণ্য বিলাস, হোটেল আল আমিন ইত্যাদি রয়েছে।প্রয়োজনীয় তথ্য: ঝরনায় বেড়াতে গেলে তার আশপাশটা পরিষ্কার রাখবেন। বিশেষ করে প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট, বোতল, খাবার প্যাকেট এসব ফেলে আসবেন না।