
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তা আমার চেয়ে আপনি ভালো জানেন। সুতরাং আমি আপনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি মানি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নয়। আপনি চাইলে আপনার বাসার কাজের বেটিকে বা যাকে খুশি তাকে এমপি-মন্ত্রী বানাতে পারেন কিন্তু চাইলেই একটি সুন্দরবন বানাতে পারবেন না।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে ‘দেশের স্বার্থ বিরোধী রামপাল চুক্তি বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে এবং ‘বাঁচাও সুন্দরবন’ নামে ফেসবুকের একটি গ্রুপের সাইকেল র্যালিতে বাঁধা-জলকামান ব্যবহারের প্রতিবাদে নাগরিক মানববন্ধন-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে উদ্দেশ্য করে শফিউল আলম প্রধান বলেন, আপনাদের কাছে আবেদন অতীতের সবকিছু ভুলে গিয়ে জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলোন। এসময় তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক-কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের আহবায়ক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাগপা সাধারন সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বিএনপি নেতা এডভোকেট আবেদ রাজা, জাতীয়তাবাদী বন্ধু দলের সভাপতি শরীফ মোস্তফা জামান লিটু, জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ। শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ দেশের উন্নয়নেরই অংশ কিন্তু রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের পরিবেশ বিপন্নকারী একটি ক্ষতিকর প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব ঐতিহ্যে দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পৃথিবীর একক বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। রাসায়নিক বর্জ নিঃস্বরণের ফলে বন্য ও জলজ প্রাণীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান তার বক্তব্যে প্রশ্ন রেখে বলেন যেই কোম্পানি নিজ দেশে এই ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিবাদের মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে এবং দেশের পরিবেশ অধিদপ্তর যেই কম্পানিকে এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেয়নি সেই কম্পানি কিভাবে বাংলাদেশে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, একগুঁয়েমি ছেড়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে সরে আসুন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যদি দেশ বাঁচে, পরিবেশ বাঁচে, দেশের মানুষ বাঁচে, তাহলে আপনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। আর যদি সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়, তখন প্রধানমন্ত্রী হয়েও কোনো লাভ হবে না’। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ভারতের ন্যাশনাল থার্মেক্স কোম্পানিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘এ কোম্পানিটি ভারতে কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এরা পশ্চিমবঙ্গে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমতি দেয়নি। সেই কোম্পানি কিভাবে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি পায়?’
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা স্বীকার করে গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন- ‘তার মানে এই নয় যে, আমাদের কাছ থেকে তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে যাবে। ৪০ দিনের কথা বলে ৪০ বছর ধরে ফারাক্কা বাঁধ চালু রাখবে’।
বিএনপি নেতা এডভোকেট আবেদ রাজা দেশের ঐতিহ্য রক্ষা ও জাতীয় স্বার্থে রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ফেসবুক ইভেন্টে কর্তৃক রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আয়োজিত ব্যতিক্রমি প্রতিবাদী সাইকেল র্যালিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের প্রতি কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।