
এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন তিন শিক্ষক নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এছাড়া একই বিভাগের অপর শিক্ষককে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে।
হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অমৃত লাল বালা, অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী, অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান, সহকারী অধ্যাপক শামসুন নাহার।
সফিকুন্নবী সামাদী ছাড়া অন্যরা নিরাপত্তা চেয়ে রাজশাহীর মতিহার থানায় জিডি করেছেন।
গত ৬ থেকে ১১ অক্টোবর এই হুমকির ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরা প্রথমে বিষয়টি চেপে যান। তবে বারবার ফোন দিয়ে একইভাবে হুমকি দেয়ায় তিন শিক্ষক জিডি করেন।
২০১৪ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ জন শিক্ষককে একইভাবে হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ- এমন হুমকির ঘটনায় শিক্ষা ও গবেষণা কাজে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। বিগত ১২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফলে ফোনে এমন হুমকির ঘটনায় তটস্থ থাকেন শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যরা।
হুমকি বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ১১ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভারতীয় নম্বর (৯১৮০১৭৮২২৭২৫) থেকে তার মোবাইলে কল আসে। রিসিভ করতেই ওপার থেকে ‘সুব্রত বাইন’ পরিচয়ে এক ব্যক্তি চার লাখ টাকা দাবি করে।
সে বলে, ‘সাভার ইপিজেডে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আমাদের দলের লোক আহত হয়ে কোলকাতায় চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসার জন্য ১৪ লাখ টাকা দরকার। ১০ লাখ টাকা যোগাড় হয়েছে, বাকি চার লাখ আপনাকে দিতে হবে।’
টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সুব্রত বাইন নামধারী ওই ব্যক্তি বলে, ‘রাজশাহীতে আমাদের লোক আছে। দ্রুত টাকা না দিলে আপনার সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে।’ ঘটনার এক ঘন্টা পরই অধ্যাপক মিজানুর রহমান নগরীর মতিহার থানায় গিয়ে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন।
সহকারী অধ্যাপক শামসুন নাহার জানান, ৬ অক্টোবর সকালে একই নম্বর থেকে ফোন করে চাঁদা চাওয়া হয়। টাকা না দিলে পরিবারের সদস্যদের অপহরণ ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি ওইদিন মতিহার থানায় জিডি করেন।
শামসুন নাহারকে হুমকি দেয়ার কিছু সময় পর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদীকে একই নম্বর থেকে ফোন দেয়া হয়।
অধ্যাপক সফিকুন্নবী বলেন, ফোন রিসিভের পর তার কথা-বার্তায় বিষয়টি বুঝতে পেরে কল কেটে দেই। কিন্তু নম্বর থেকে বারবার ফোন আসতে থাকে। তবে আমি আর রিসিভ করিনি।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে একই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অমৃতলাল বালাকে।
তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর দুপুরে ‘সুশান্ত’ নামে একজন ফোন করে আমাকে দুর্নীতির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সে কৌশলে আমার কাছে অর্থ দাবি করে।
ফোনের লাইন কেটে দিলেও সে বারবার ফোন দিয়ে একই কথা বলছেন। ফলে ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে আমার পরিবার। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে পরদিন জিডি করেছি।
তিনি জানান, বিব্রতকর এমন হুমকির ঘটনায় এবারের র্দুগাপূজা উৎসবটা মাটি হয়ে গেছে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবীর বলেন, তিন শিক্ষক জিডি করেছেন। তবে অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদীর বিষয়টি জানি না। তিনি জিডি করেন নি। হুমকি এসেছে ভারতীয় নম্বর থেকে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।