খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬: ঢাকায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের ২৪ ঘণ্টার কম সময়টুকু দু’দেশের ৪০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যময় বলা যায়। দু’দেশের জনগণের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অবশ্য শতাব্দীপ্রাচীন বা ঐতিহাসিক পরিব্রাজকদের লেখনীতে আরও অনেক পুরনো। সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও প্রস্তুতি বেশি দিনের এবং ফলাফল বড়। এর তাৎপর্য ভবিষ্যতে ক্রমশ উন্মোচিত হবে, যার প্রভাব শুধু দু’দেশের নয়, চীন ও দক্ষিণ এশীয় পুরো অঞ্চলের ৩১৮ কোটি মানুষের জীবনে অনুভূত হবে। ভূ-রাজনীতির জটিল হিসাব-নিকাশ পাশে সরিয়ে রেখে এই সফরের কেন্দ্রবিন্দুটি হচ্ছে বিশ্বের দরিদ্র-অধ্যুষিত একটি বড় অঞ্চলে জীবনমান উন্নয়নের প্রয়াস। বিশ্বাস করা যায় যে, বাংলাদেশ ও চীন উভয় সরকার ঐকান্তিকভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার পথে দূর-লক্ষাভিসারী উন্নয়নের পথরেখা অঙ্কন করেছে, যাতে অন্য প্রতিবেশীদেরও স্বাভাবিক স্থান রয়েছে। এই নিবিড় সম্পর্কের বাতাবরণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে চীনের ভূমিকা অনুল্লেখ্য কটুস্মৃতি হয়ে যাবে। বিশ্ব ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল নয়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে ঘোষণা করেছেন দু’দেশ সম্পর্ককে ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বে’ নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। কৌশলগত শব্দটিতে ইংরেজির স্ট্র্যাটেজিক শব্দের মর্মার্থ সম্পূর্ণ আসে না। এর সংজ্ঞা বা বস্তুনিষ্ঠ মান নিয়ে কূটনৈতিক জগতে ধারণার হেরফের থাকলেও বাংলাদেশ ও চীন স্ব-স্ব জনগণের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়তে এবং লক্ষ্য অর্জনের পথ সম্পর্কে ঐকমত্যে পেঁৗছেছে বলেই বোধগম্য। সফরে শীর্ষপর্যায়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে ২৩ দফা একটি যৌথ বিবৃতিতে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের ঐকমত্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলো সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ের বিনিয়োগ, বাণিজ্য, রফতানি ও প্রকল্প সংক্রান্ত। মোট কত টাকার ঋণ ও আর্থিক সহায়তা তা এখনই জানা না গেলেও স্পর্শ করা হয়েছে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, সন্ত্রাস দমন, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা এবং সমুদ্র অর্থনীতি অবধি। পদ্মা সেতু নির্মাণে অংশীদার চীন এবার ভৌত অবকাঠামোয় যুগান্ত আনতে সক্ষম কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে আসছে। এটিসহ ৬টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেছেন দুই সরকারপ্রধান। দু’দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্যের সমীক্ষার ইচ্ছা ব্যক্ত এবং ২০১৭ সালকে ‘বিনিময় ও বন্ধুতার বছর’ ঘোষণা করা হয়েছে। চীনকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের অভিযাত্রায় আমাদের এখন জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে আসা কর্মসূচিগুলো দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। উন্নয়ন কোনো স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া নয় বরং প্রখর জ্ঞান ও কঠোর শ্রমসাপেক্ষ। অর্থায়নের প্রণালি, শর্তাবলি স্থির করায় প্রাতিষ্ঠানিক-প্রশাসনিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা হবে অতীব প্রয়োজনীয়।