খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ : আগামী নতুন এ নির্বাচনের মাধ্যমে কে হবেন নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা হিসাব-নিকাশ। ২৮ ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন। অন্য নির্বাচনগুলোর মতো মাঠে-ঘাটে কিংবা চায়ের দোকানে নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথার ঝড় না ওঠলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে নেতাদের কাছে। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডের লবিং শুরু করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলটির দুই নেতার নাম আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। তারা নানাভাবে তৎপরতা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এ দুই নেতা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভুঁইয়া এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক এডভোকেট আসাদুজ্জামান। তবে এখনো আলোচনায় আসেনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার নাম।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নরসিংদীর একজন (জনপ্রতিনিধি) ভোটার বলেন, নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডে পর জেলা আওয়ামী লীগে মেরুকরণ হয়েছে। দলের ত্যাগি নেতারা অনেক দিন পর পদ পেয়েছেন; চাঙ্গা হয়েছে আওয়ামী লীগ। টানা দুবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভুইয়া। তিনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, বিনিময়ে কিছুই পাননি। তাই দলের মনোনয়ন তার দিকেই ঝুলছে। অন্যদিক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রশাসক এডভোকেট আসাদুজ্জামান মনোনয়ন নিয়ে অনেকটাই চাপে থাকবেন। বিগত বছ গুলোতে প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় নরসিংদীকে তিনি কি দিতে পেরেছেন, তার হিসাব-নিকাশ চলছে ভোটারদের মধ্যে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০ সদস্য পদে জনপ্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদ। নির্বাচনে ভোটার হিসেবে থাকবেন স্থানীয় সরকারের অধীনে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যরা।
নরসিংদীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল দলের অংশিদারিত্ব থাকবে না। কেননা স্থানীয় সরকারের সকল দপ্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের। দুই একটি পদে বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলেও তা খুবই নগন্য। সেই ক্ষেত্রে বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মন্জুর এলাহী বলেন, এ নির্বাচনের কোনো মানে হয় না, এর কোনো গুরুত্ব নেই আমাদের কাছে। এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
এদিকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দুই সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় টিকিট পেতে তাকিয়ে আছে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তবে হাইকমান্ডে লবিং করে অনেকটাই এগিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভুইয়া। বর্তমানে জেলার প্রতিটি উপজেলায় তার অনুগত মেয়র ও চেয়ারম্যান রয়েছে।
প্রার্থিতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে নিবার্চন করব। দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী এডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করব। মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করব না।
কে পাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিট জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু বীরপ্রতীক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় আলোচনার মাধ্যমে একজন প্রার্থীর নাম দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব করবে। পরে শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে মনোনয়ন দেবে। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। প্রতিটি জেলা পরিষদের অধিক্ষেত্রে সৃষ্টি করা হবে ১৫টি ইউনিট। এই ইউনিট সৃষ্টি, সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক নরসিংদী জেলাকে ১৫টি ইউনিটে বিভক্ত করে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড গঠন করে তা বহুল প্রচারের জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।